Saturday, December 7, 2019

মিজান আজহারী ভেঙ্গে দিয়েছেন ধৈর্য্যের বাঁধঃ গোলাম কিবরিয়া আজহারী



সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া আজহারি।। জনাব সুমিষ্টভাষী বক্তাআল আজহারের দিক থেকে আমার ৪ বছরের জুনিয়র আপনিসুন্দর চেহারাইংলিশ ভাষীআই ই এল টি এস সেলিব্রেটি বাংলা বক্তা।আপনি নিঃসন্দেহে ইংলিশ খুব ভালো শিখেছেন মিশরের কায়রোর আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে। কিন্তু আল আজহার যেই নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত তা আপনি শিখতে ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ আপনার ক্লাসমেট ড. সাইফুল ইসলাম আজহারী ও অন্যান্য অনেকের নিকট থেকে জেনেছিআপনি আল আজহারে পড়ার চাইতে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিকায়রোমিশরের ইংলিশ কোর্সের প্রতি বেশি মনোযোগী ছিলেন। এই দেশের শিক্ষিত ইংলিশ স্পিকিং প্রজন্মকে জামায়াত মওদুদীবাদের প্রতি ধাবিত করতে এটা একটা মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে নিতে চেয়েছেন। কারণ ফটর ফটর ইংলিশ বলতে পারলেই যেআমাদের শিক্ষিত সমাজ অনেক জ্ঞানী মনে করে। কিন্তু তারা এটা বুঝতে পারেন না যেজ্ঞানের গভীরতা ও ইলমি তাহকিক বা জ্ঞানের ব্যুৎপত্তি অন্য বিষয়।

আপনি জানতে ও বুঝতে ব্যার্থ হয়েছেন যেআল আজহার সম্পূর্ণভাবে মহান আল্লাহ তায়লা উনার ভালোবাসামহান আল্লাহ পাকের শানে পরিপূর্ণ আদব বজায় রাখাহুজুরে আকরাম রাসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিপূর্ণ ভালোবাসাপ্রিয় নবিজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শানে সম্পূর্ণ আদব বজায় রাখাপ্রিয় নবিজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিবার তথা আহলে বাইত শরীফ (আলাইহিমুস সালাম)উম্মাহাতুল মুমিনিন (আলাইহিন্নাস সালাম) উনাদের প্রতি পরিপূর্ণ ভালোবাসা ও আদব বজায় রাখাখুলাফায়ে রাশিদিন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের প্রতি ভালোবাসা ও আদবসাহাবায়ে কেরামের প্রতি পূর্ণ ভালোবাসা ও আদবমহান আল্লাহ পাকের অলি আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহিমগনের প্রতি পূর্ণ ভালোবাসা ও আদব ইত্যাদির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এটাই ইসলামের মূল বিষয় যার ওপর সম্মানিত আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ ইসলামিক মাদরাসা দাঁড়িয়ে আছেন। ভালোবাসা ও আদবই সেখানের মূল বিষয়।

আপনি ইংলিশ ভাল রপ্ত করেছেন ঠিককিন্ত খাঁটি বাংলা ভাষায় আদব বজায় রেখে হুজুরে আকরাম রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামউনার আহলে বায়তে আতহার (আলাইহিমুস সালাম)আজওয়াজে মুতাহহারা উম্মাহাতুল মুমিনিন (আলাইহিন্নাস সালাম)খুলাফায়ে রাশেদিন (রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা)সাহাবায়ে কেরাম (রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা) এবং মহান আল্লাহ পাকের খাস বন্ধু তথা অলি আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহিমগনের শানে কথা কিভাবে বলতে হয় তা রপ্ত করতে পারেন নাই।

আল আজহার ইউনিভার্সিটি তাসাউফের ওপর প্রতিষ্ঠিতআহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের আক্বিদাহ ও আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত। আর তাসাউফের মূল বিষয় হচ্ছে আদব, Etiquettes Manners and Showing Respect to Others.

আপনি ভাল করে জানেন যেআল আজহারের বেশিরভাগ প্রফেসর তাসাউফে বিশ্বাসী। অল্পকিছু আছেন যারা আপনাদের সালাফিবাদ ও ইখওয়ানুল মুসলিমিন বা মুসলিম ব্রাদারহুডের আকিদাতে বিশ্বাসী।

আপনি ও আপনাদের সমমনারা আল আজহারের ডক্টরস প্রফেসরসদের কাছ থেকে তাসাউফের এই মূল বিষয় "আদব" শিখতে চরমভাবে ব্যার্থ হয়েছেন।

আর কেউ না জানুক আপনি জানেন যেআমি গত একবছর যাবত ফেসবুক মেসেঞ্জার ইনবক্সে অনেক বিষয়ে আপনাকে ইসলাহ (শুদ্ধ) করার চেষ্টা করেছি। আপনিও অনেক বিষয় স্বীকার করেছেন যেআপনার পক্ষ থেকে ভুল হয়েছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে জনগনকে সতর্ক করতেই হবে আপনার বেয়াদবিগুলোর ব্যাপারে। কারণ আপনি মহান আল্লাহ পাক  উনার হাবিব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামপ্রিয় নবিজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মানিত আহলে বাইত বা পরিবার (আলাইহিমুস সালাম)আজওয়াজে মুতাহহারা তথা উম্মতের আম্মাজান (আলাইহিমুস সালাম)গণখুলাফায়ে রাশেদিন (রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম)সাহাবায়ে কেরাম (রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম)  মহান আল্লাহ পাক উনার স্বীকৃত আওলিয়ায়ে কেরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগনের শানে একের পর এক বেয়াদবি করেই যাচ্ছেন। উনাদের শানে আপনার শব্দচয়ন মারাত্মক আপত্তিজনক।

"আল্লাহ হালায়" "নবী হালায়" "আবে হালা আব্বা" (হজরত ওমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে উদ্দেশ্য করে)ইন্টেক্ট নাভার্জিন নাদুইবার তালাক খাওয়া (আম্মাজান খাদিজাতুল কুবরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ওয়া আলাইহাস সালামকে উদ্দেশ্য করে)সিক্স প্যাকউম্মি মানে নিরক্ষর-ইল্লিটারেট ইত্যাদি বাজে বাজে শব্দ খোদ রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শানে প্রয়োগ করে এসেছেন একেরপর এক আলোচনাতে। মানুষকে মজা দিতে গিয়েলোক হাসাতে গিয়েওয়াজের আকর্ষণ ধরে রাখতে সস্তা ভাঁড়ামো করা কোন আজহারিকে মানায় না। এগুলো নোয়াখাইল্লা আফসারি ও বিড়ি টানা লোক দেখানো বক্তা জেহাদিকে মানায়।

আপনি কিভাবে পারলেনপৃথিবীর ইতিহাসের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাশীল বিষয় প্রিয় নবিজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাক্কি জীবন ও মাদানি জীবনকে ক্রিকেটের দুই ইনিংসের মতো ফালতু খেলাধূলার সাথে তুলনা করতেমানুষকে হেদায়াত করতে ক্রিকেটের উদাহরণ তুলে আনতে হয়আজব তো! নাউজুবিল্লাহ মিন জালিক।

মহান আল্লাহ পাক থেকে শুরু করে আল্লাহ পাকের আওলিয়াগন কেউ আপনার সেই বাজে শব্দচয়ন থেকে বাদ যান নাই।

আপনার লেটেস্ট ডেলিভারিমাওলা হযরত আলি কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ওয়া আলাইহিস সালামের শানে "মদ খাইয়া নামাজে দাঁড়াইছে" "মাতলামি করতে করতে" "পড়তে শুরু করছে"। হযরত অমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ওয়া আলাইহিস সালামের শানে “মদ খাওয়ার রাজা ছিলো” বলেছেনমানে কী এসব বেয়াদবিপূর্ণ ভাষারএকটা দন্ত "ন" লাগাতে আপনার এত কষ্ট হয়আপনার ডায়লগ ডেলিভারি ভয়ানক উগ্র ও বেয়াদবিপূর্ণ। এই স্পর্শকাতর বিষয়গুলো এরকম উগ্র ও আক্রমণাত্মক শব্দে কেউ বর্ণনা করে না। এসব লক্ষন ভালো না।

হ্যাঁআমি মানছি সিহাহ সিত্তার অনেক কিতাবের হাদিসের বাহ্যিক শব্দগুলো অনেকটা এরকম ইংগিত করে যেমাওলা হযরত আলি কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ওয়া আলাইহিস সালাম মদপান করে নামাজে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু এই হাদিসগুলোর কয়েকজন রাবি সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণ চরম আপত্তি করেছেন। ইলমি তাহকিক যার আছে সে জানে যেঃ [والصحيح أن الذي صلى بهم هو عبد الرحمن بن عوف]

মূলত নামাজে যিনি ইমামতি করেছিলেন তিনি ছিলেন হজরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। যার ভুল আয়াত তিলাওয়াতের প্রেক্ষাপটে সূরাহ নিসার আয়াত শরীফ "ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানু লা তাকরাবুস ছলাতা ওয়া আনতুম সুকারা..." "হে ঈমাণদারগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাকতখন নামাযের ধারে-কাছেও যেওনাযতক্ষণ না (তোমরা) বুঝতে সক্ষম হও যে তোমরা কি পাঠ করিতেছ।" (সূরাহ আন নিসা শরীফঃ আয়াত শরীফ /৪৩) নাজিল হয়েছে। এই সংক্রান্ত অন্যান্য হাদিস শরীফগুলোর আলোকে গবেষণা করলে আপনি জানতে পারতেন যেমাওলা হযরত আলি কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ওয়া আলাইহিস সালাম খোদ এই হাদিসখানার বর্ণনাকারী। তিনি মদপান করেন নাই এতেই প্রমান হয়ে যায়। [তথ্যসূত্রঃ ইমাম হাকিম নিশাপুরি রহমতুল্লাহি আলাইহিওফাত ৪০৫ হিজরিউনার সংকলিত বিখ্যাত হাদীস শরীফের কিতাব "আল মুস্তাদারেক আলাস সাহিহাইন" এর ৩১৯৯ নং হাদীস শরীফ ২য় খন্ড ৩৩৬ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্যতিনি স্পষ্ট বলেছেন খারেজিরা এই হাদীস শরীফের ইমামতি মাওলা হযরত আলি কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ওয়া আলাইহিস সালামের দিকে লাগিয়ে দিয়েছে। অথচ মাওলা হযরত আলি কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ওয়া আলাইহিস সালাম নামাজ পড়ান নাই এবং মদও পান করেন নাই। সালাফিদের শায়খ ইবনে তাইমিয়ার ছাত্র ইমাম জাহাবি রহমতুল্লাহি আলাইহিও এই হাদীস শরীফকে সহিহ বলেছেন]

এর চাইতেও আরো শক্তিশালী সনদে তিরমিজি শরীফআবু দাউদ শরীফনাসাই শরীফ ও মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রেওয়ায়াতে এসেছে যেমদের হুকুম সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা নাজিল সংক্রান্ত হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ওয়া আলাইহিস সালামের দোয়া ও আরজির প্রেক্ষাপটে সূরাহ নিসার এই আয়াতখানা "লা তাকরাবুস ছলাতা ওয়া আনতুম সুকারা" নাজিল হয়েছে। এই আয়াত শরীফ নাজিলের ঘটনার সাথে মূলত সাহাবাগনের মদপানের সেই ঘটনার আদৌ কোন সম্পর্ক নেই।

মাওলা হযরত আলি কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ওয়া আলাইহিস সালাম যিনি জীবনে কোনদিন কোন মূর্তির সামনে মাথা নত করেন নাইযিনি নামাজ ফরজ হওয়ার আগে থেকেই হুজুরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পেছনে আম্মাজান খাদিজাতুল কুবরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ওয়া আলাইহাস সালামের সাথে জামায়াতের সাথে নামাজ পড়ে অভ্যস্ত। যখন দুনিয়ার বুকে এই তিনজন ছাড়া আর কেউ নামাজ পড়তেন না। নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আহলে বাইতের অন্যতম প্রধান সদস্য যিনি মাওলা হযরত আলি কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ওয়া আলাইহিস সালামযাদেরকে সকল গোনাহ থেকে মাহফুজ রাখার ঘোষণা খোদ কুরআন মাজিদে এসেছে (সূরাহ আহজাব শরীফের ৩৩/৩৩) সেই মাওলায়ে মুমিনিন কখনো মদ্যপ হয়ে নামাজে দাঁড়াতে পারেননা মদপান হারাম হওয়ার আগেপরের তো প্রশ্নই আসে না। মাওলায়ে কায়েনাতের পুরো জীবন ছিল নিষ্কলুষ পূত ও পবিত্র।

আপনি ভাল বক্তা হতে পারেনকিন্তু দ্বীনের ব্যাপারে ব্যুতপত্তি অর্জন বা গভীর ইলমি অনুসন্ধানে আপনি ব্যর্থ। আগেও অনেকবার প্রমাণ পেয়েছিআবারো পেলাম।

শুনুনসর্বশেষে একটা কথাই বলববুখারি শরিফে (হাদিস নং-৩৬১০মুসলিম শরিফহাদিস নং- ১০৬৪) যেই হাদীস শরীফখানা ঘুরেফিরে বার বার এসেছেজুল খুয়াইসরা আত তামিমি সম্পর্কে৷ যে কালিমাতে বিশ্বাসী মুসলমান ছিলনামাজ পড়ত অনেক বেশিকুরআন মাজিদ তিলাওয়াত করত অনেক বেশিবাহ্যিক সুন্নাতের অনুসরণ করত অনেক বেশি। কিন্তু প্রিয় নবিজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নাম ধরে ডেকে সে আদেশ দিয়েছিল এই বলে, "হে মুহাম্মাদ আপনি ন্যায়বিচার করুন!" সাথে সাথে খারেজিদের পূর্বপুরুষে পরিণত হয়েছে। হজরত আবু সায়িদ খুদরি রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম থেকে অনেক অনেক সনদে ও রেওয়ায়াতে এসেছে এই হাদিস শরীফখানা।

বাহ্যিক ইসলামের পুরোপুরি অনুসরণ শেষ কথা নয় রে ভাই! মহান আল্লাহ পাকের ওয়াস্তে বুঝার চেষ্টা করুন। আদব যদি না থাকে আপনি বেয়াদব। আর বেয়াদবই খারেজি। খারেজি কিন্তু কেউ মহান আল্লাহ পাকের শানে গুস্তাখির জন্য হয় নামুলত মহান আল্লাহ পাকের প্রিয় মাহবুব বান্দাগণের শানে বেয়াদবি ও বাজে শব্দ ব্যবহারের কারণে হয়।

পরিশেষে একটি আয়াত শরীফ তাফসীর সহ পেশ করছি রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে বেয়াদবির পরিমান কি তার সম্পর্কেঃ

মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেনঃ [يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا لَا تَرْفَعُوٓا أَصْوٰتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِىِّ وَلَا تَجْهَرُوا لَهُۥ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَن تَحْبَطَ أَعْمٰلُكُمْ وَأَنتُمْ لَا تَشْعُرُونَ]
বাংলা অর্থঃ [২] হে ঈমানদার লোকেরা, (তোমরা যখন কথা বলো তখন) তোমাদের আওয়াজ যেনো (আমার) রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আওয়াজ এর চেয়ে উর্ধ্বে না যায়। [১] এবং (তোমরা) নিজেদের মধ্যে একে অপরের সাথে যেভাবে উচ্চস্বরে (বা আদব ছাড়া) কথা বলোঅনুরূপ ভাষায় ও কথা বলনাএমন যেনো কখনো না হয় যে তোমাদের সকল নেক আমল বা ইবাদত (শুধুমাত্র এই কারনেই) বরবাদ করে দেওয়া হবেঅথচ তোমরা তা জানতেও পারবেনা।

[১] রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মজলিসের এটা দ্বিতীয় আদব ছিলো। যারা রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মজলিসে ওঠাবসা ও যাতায়াত করতেন তাদেরকে এ আদব-কায়দা ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়ার জন্য মহান আল্লাহ পাক এই আয়াত শরীফ নাজীল করেছেন। এর উদ্দেশ্য ছিল রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার সাথে দেখা-সাক্ষাত ও কথাবার্তার সময় যেন ঈমানদাররা উনার সম্মান ও মর্যাদার প্রতি তীক্ষনভাবে লক্ষ্য রাখেন। কারো কণ্ঠ যেন উনার কণ্ঠ থেকে উচ্চ না হয়। রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনাকে সম্বোধন করতে গিয়ে কেউ যেন একথা ভুলে না যায় যেকার সাথে সে কোন কথা বলছে। তাই সাধারণ মানুষের সাথে যেরূপ কথাবার্তা এবং স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার সাথে কথাবার্তার মধ্যে পার্থক্য থাকতে হবে এবং কেউ রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার সাথে উচ্চস্বরে কথাবার্তা বলবেন না যেমন পরস্পর বিনা দ্বিধায় করা হয়কারণ তা হলো সবচেয়ে নিকৃষ্ট বে-আদবি ও ধৃষ্টতা দেখানো। আর একারণেই এই আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার পর সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের অবস্থা পাল্টে যায়। উনারা এরপর থেকে খুব আস্তে আস্তে কথা বলতেন। সাবেত ইবনে কায়স রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কণ্ঠস্বর স্বভাবগতভাবেই উচু ছিল। এই আয়াত শরীফ শুনে তিনি ভয়ে সংযত হলেন এবং তখন থেকে চিরদিনের জন্য উনার কণ্ঠস্বর নীচু করলেন।

√ সূত্রঃ ৪৯/২ [বুখারী শরীফঃ হাদীছ শরীফ নং ৪৮৪৬ এবং মুসনাদে আহমাদঃ শরীফঃ হাদীছ শরীফ নং ৩/১৩৭]

[২] অনুরূপভাবে রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার কোনো সুন্নত মুবারক সম্পর্কে জানার পরেও সেটা মানতে যদি কেউ গড়িমসি বা সামান্যতম অনীহা প্রকাশ করে তাহলে তাও চরম বে-আদবি। এ আয়াত শরীফ এর নিষেধাজ্ঞার অধীন। রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার হুজরা মোবারকের সামনেও বেশি উঁচুস্বরে সালাম ও কালাম করা নিষিদ্ধ ছিলোরাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার সম্মান ও আদব উনার বিছাল শরীফের (ওফাতের) পরও দুনিয়ার জমিনের ন্যায় ওয়াজিব। তাই উনার পবিত্র রওজা শরীফের সামনেও বেশী উচুস্বরে সালাম ও কালাম করা আদবের খেলাফ (এবং যারা ওয়াজ মাহফিলে ও বেয়াদবের মতো সম্বোধন করে তারাও এই হাদীছ শরীফের অন্তর্ভুক্ত)। হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ওয়া আলাইহিস সালাম দুই ব্যক্তিকে মসজিদে নববী শরীফে উচ্চস্বরে কথা বলতে দেখে জিজ্ঞেস করলেনতোমরা কোথাকার লোকতারা বললঃ আমরা তায়েফের লোক। তিনি বললেনযদি তোমরা মদীনাবাসী হতে তবে আমি তোমাদের বেত্ৰাঘাত করতাম। তোমরা রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার মসজিদে উচ্চস্বরে কথা বলছ কেন?

√ সূত্রঃ [বুখারী শরীফঃ হাদীছ শরীফ নং ৪৭০]

সুতরাং যারা রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনাকেসাধারণ মানু‌ষের মতোউনি মাটিরউনি হাজির নাজির ননউনার ছায়া ছিলোউনি ইলমে গাইবের অধিকারী ননবা উনার সম্পর্কিত যেকোনো কিছুতে বেয়াদবি করে তাদের জেনে রাখ প্রয়োজন যে তাদের তো কোন আক্বীদাহ-ই নাই আছে কেবল সামান্য আমল যেগুলোর বড়াই তারা করছেসেগুলি ও যে কখন নাই হয়ে যাবে তাদের বেআদবির কারনে তারা তা ঘূর্ণাক্ষরেও জানতে পারবে না।


শেয়ার করুন

2 comments:

  1. যদি বাঁধ ভেঙে যায় তাহলে ডুবে মর।

    ReplyDelete
  2. আজাইরা পোস্ট কে করতে দিসে?? আপনি পড়াশোনা করবেন কাউকে ফলো করার জন্য?? নাকি সত্য মিথ্যা ভালো মন্দের পার্থক্যকরার জন্য.... যদি ফলো করাই পড়াশোনার উদ্দ্যেশ্য যদি সিনিয়রদের ফলো করা হয় তাহলে হিন্দুদের জান্নাতে যাবে। কারণ তাদের মত ভালো ফলো কেউ করে না। তাদের বাবা মায়েরা যেভাবে গরুর মুত্র পান করতো এরাও ঠিক একিই রকম করে গো মুত্র খায় দেখছেন কি কপিটাই না করে!!!

    ReplyDelete