Saturday, December 7, 2019

মিজানুর রহমান আজহারী নামক ভাইরাসে আক্রান্ত মোডারেট মুসলিম সমাজের পরিনতি কি?


এই মুহূর্তে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে বেশী আলোচিত-সমালোচিত বিষয় হচ্ছে, কথিত ইসলামিক বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীর বিভিন্ন বক্তব্যের মধ্যে থাকা কুফুরি বিষয়গুলো।

পক্ষে বিপক্ষে গালিগালাজ আর যুক্তি পাল্টা যুক্তির বন্যায় ভেসে যাচ্ছে অনেকের ঈমান নামের সোনার হরিণ। কোন দলিল প্রমান আর যুক্তিই ফেরাতে পারছেনা মিজানুর রহমান আজহারীর অনুসারী কথিত মোডারেট মুসলিম যুব সম্প্রদায়কে। আল্লাহ, রাসূল, আর ঈমানকে পরিত্যাগ করে হলেও মিজানুর রহমান আজহারীর তরতাজা কুফুরির বিপরীতে তাকে নির্দোষ প্রমানের জিহাদে মেতে উঠেছে মূল ইসলামের সাথে সম্পর্কহীন ঐসকল যুবক ও মিজানুর রহমান আজহারীর অন্ধ অনুসারীরা।

প্রথমে দেখে নেই, মিজানুর রহমান কি কি কুফুরি কর্মকাণ্ড করেছে, তারপর তার এইসব কর্মকাণ্ডের ব্যপারে কুরআন হাদীস কি বলেন তাও দেখে নেবঃ

তার কৃত কিছু অনৈসলামিক কুফুরি বাক্য নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ

১) আল্লাহ হালায় কুরআন পাঠাইছে নবীর ঘাড়ে। নবী হালায় বয়ান দিছে সাহাবাগোর মাঝে। আমরা হালায় বয়ান দিয়া যাইতাছি হালায়। নাঊযুবিল্লাহ! (http://bit.ly/34QSCNN)

২) বিশ্বনবীর মাক্কী ইনিংসের খেলার নিয়ম ছিল ঠেক দিয়ে খেলতেন। ক্রিকেটে বলে উইকেট বাঁচায়ে খেলতে হবে তোমায়। উইকেট যাতে পড়ে না যায়। বিশ্বনবী ঠেকায়ে ঠেকায়ে খেলছেন আর চার-ছক্কা মারছেন সব মাদানি ইনিংসে। নাঊযুবিল্লাহ! (http://bit.ly/2RfG2Ui)

৩) মদ খাওয়ার পরে উমরের ছেলে আবু শাহামা টাল হয়া গেছিল। উমর ফারুকরে কয়, আবে হালায় আব্বা তুমি কেমন আছো? তোমারেতো হালায় আমি চিনবার পারছিনা। নাঊযুবিল্লাহ! (http://bit.ly/34QSCNN)

৪) খাদিজা ছিল বুড়ি, তালাক প্রাপ্তা, প্রৌঢ়া, ইনটেক্ট না, ভার্জিন না, ৪০ বছরের বিধবা মহিলা। নাঊযুবিল্লাহ! (http://bit.ly/2DLGEcj)

৫) নবীজী মূর্খ ছিলেন, তাঁর অক্ষরজ্ঞান ছিল না। তিনি ছিলেন নিরক্ষর। আল্লাহ তাকে অক্ষরজ্ঞানের শিক্ষা দেয়নি। তিনি আলিফ, বা, তা, ছা ছিনতেন না, ১, ২, ৩, ৪, ৫ কিভাবে লিখে তা জানতেন না। নাঊযুবিল্লাহ! (http://bit.ly/2PgUZmr)

৬) হযরত আলী মদ খেয়ে মাতাল হয়ে নামাজে দাঁড়ায়ে সূরাহ ভুল পড়েছিল। হযরত উমর ছিলো মদুড়িদের রাজা। নাঊযুবিল্লাহ! (http://bit.ly/2Lp55Ar)

কিন্তু এদিকে মিজানুর রহমান আজহারি নিজেকে ফিরাউনের ভাতিজা বলেও দাবী করেছে। ফিরাউন নাকি তার চাচা। (http://bit.ly/2rWUGFa)

তার এইসব কুফুরি বক্তব্যের বিপরীতে আল কুরআন ও হাদীস শরীফে কি কি বলা হয়েছে তার যৎসামান্য মুসলিম উম্মাহর খেদমতে তুলে ধরা হলো।

মহান আল্লাহ পাক ও রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ব্যপারে বাজে শব্দচয়ন বা গালিগালাজ!

প্রথমতো, ওয়াজ করতে গিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনাকে শালা(হালা) বলার ব্যপারে কি ফায়সালা কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ দেন তা দেখিঃ

সালা হওয়ার জন্য যে জিনিস বাধ্যতামূলক তা হলো সে মানুষ হবে, দ্বিতিয়ত এমন কাউকে বিবাহ করতে হবে যার ভাই আছে, তৃতীয়ত সে হবে সৃষ্টি, স্রষ্টা নয়।

কিন্তু মহান আল্লাহ পাক সৃষ্টি নন, উনার কোন বোন নাই যে উনার বোন কে বিবাহ করে উনাকে শালা(হালা) বলা যাবে, এটা সম্পূর্ণ কুফুরি কারণ সূরাহ ইখলাস শরীফের ৩ নং আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই বলেছেনঃ [لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ] তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং উনাকেও কেউ জন্ম দেয়নি। এছাড়াও সূরাহ তওবা শরীফের ৩০ নং আয়াতে পাকে মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ [وَقَالَتِ الْيَهُودُ عُزَيْرٌ ابْنُ اللّهِ وَقَالَتْ النَّصَارَى الْمَسِيحُ ابْنُ اللّهِ ذَلِكَ قَوْلُهُم بِأَفْوَاهِهِمْ يُضَاهِؤُونَ قَوْلَ الَّذِينَ كَفَرُواْ مِن قَبْلُ قَاتَلَهُمُ اللّهُ أَنَّى يُؤْفَكُونَ] ইহুদীরা বলে ওযাইর মহান আল্লাহ পাক উনার পুত্র এবং নাসারারা বলে ইসা আলাইহিস সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার পুত্র'। এ হচ্ছে তাদের মুখের কথা। এরা পূর্ববর্তী কাফেরদের মত কথা বলে। মহান আল্লাহ পাক এদের ধ্বংস করুন, এরা কোন উল্টা পথে চলে যাচ্ছে।

অর্থাৎ উনার ব্যপারে ব্যবহৃত শালা শব্দ ব্যবহার চরম বেয়াদবি ও কুফুরির কারণ এতে উনাকে সৃষ্টির পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে।

আর মহান আল্লাহ পাক উনাকে ও রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গালি দেওয়া কুফরি, গালিদাতাকে হত্যা করা ওয়াজিব। এতে কোনো ঈমানদার মুসলিমের দ্বিমত নেই। দ্বিমত শুধু তার তওবার ক্ষেত্রে, তওবা তাকে মৃত্যুদণ্ড থেকে অব্যাহতি দিবে কি দিবে না, তাও যদি সে তওবা করে? এ সম্পর্কে দুটি মত প্রসিদ্ধ।

মহান আল্লাহ পাক উনাকে ও রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গালি দেওয়া ও উনাদের সাথে উপহাস করা মূলত উনাদেরকে কষ্ট দেওয়া। কষ্ট দেওয়ার শাস্তি সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ [إِنَّ الَّذِينَ يُؤْذُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُّهِينًا] নিশ্চয় যারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ও রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেয়, মহান আল্লাহ পাক তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে লানত করেন, এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন অপমানজনক আযাব। [সূরাহ আহযাব শরীফঃ ৩৩/৫৭]

মহান আল্লাহ পাক উনাকে ও রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেয়ার অর্থ উনাদের ক্ষতি করা নয়, কারণ কষ্ট দুপ্রকারঃ এক প্রকার ক্ষতি করে, অপর প্রকার ক্ষতি করে না। মহান আল্লাহ পাক উনার ও রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কোনো বস্তু ক্ষতি করতে পারে না। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ হে আমার বান্দাগণ, তোমরা নিশ্চয় আমার ক্ষতি পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না যে, আমার ক্ষতি করবে।[সহিহ মুসলিম শরীফঃ ২৫৭৭]

মহান আল্লাহ পাক উনাকে ও রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গালমন্দকারীর কুফরি প্রসঙ্গে সবাই একমতঃ

প্রত্যেক মাজহাবের আলেম, যারা বলেন কালিমার সাক্ষী ও আমল উভয় মিলে ঈমান, তাদের নিকট মহান আল্লাহ পাক উনাকে ও রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গালি দেওয়া কুফরি। গালিদাতার কোনো অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়।

ওমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম থেকে মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেনঃ যে মহান আল্লাহ পাক উনাকে কিংবা কোনো নবী রাসূল আলাইহিমুস সালামকে গালমন্দ করলো, তাকে হত্যা কর।[আস-সারেমুল মাসলুল শরীফঃ পৃষ্টা ১০২]

ইব্‌ন আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেনঃ যে কোনো মুসলিম মহান আল্লাহ পাক উনাকে কিংবা কোনো নবী রাসূল আলাইহিমুস সালামকে গালমন্দ করল, সে মহান আল্লাহ পাক উনার ও রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের উপর মিথ্যারোপ করলো, এটা তার ধর্ম ত্যাগ। তার নিকট তওবা তলব করা হবে, যদি সে ফিরে আসে ভাল, অন্যথায় তাকে হত্যা করা হবে।[আস-সারেমুল মাসলুলঃ পৃষ্টা ১০২]

মহান আল্লাহ পাক উনাকে গালমন্দকারী সম্পর্কে ইমাম আহমদ রহিমাহুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি বলেনঃ মহান আল্লাহ পাক উনাকে গালমন্দকারী মুরতাদ, তাকে হত্যা করা হবে।[আস-সারেমুল মাসলুলঃ পৃষ্টা ৪৩১] উনার ছেলে আব্দুল্লাহ রহিমাহুল্লাহ তিনিও এরূপই বর্ণনা করেছেন।

একাধিক আলেম মহান আল্লাহ পাক উনাকে ও রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গালমন্দকারীর কুফরি ও  তাকে হত্যা প্রসঙ্গে ঐক্যমত্য পোষণ করেছেনঃ

ইব্‌ন রাহাওয়ায়হে রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ সকল মুসলিম একমত যে, মহান আল্লাহ পাক উনাকে ও রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গালি দিল, অথবা মহান আল্লাহ পাক উনার নাযিলকৃত কোন বস্তু প্রত্যাখ্যান করল, অথবা উনার কোনো নবীকে হত্যা করলো, সে কাফের; যদিও সে আল্লাহর নাযিলকৃত অহি বিশ্বাস করে।[আত-তামহিদ লি-ইব্‌ন আব্দুল বাররঃ ৪/২২৬, আল-ইসতেজকার লি-ইব্‌ন আব্দুল বাররঃ ২/১৫০]

কাদি ইয়াদ রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ এ প্রসঙ্গে কোনো দ্বিমত নেই যে, কোনো মুসলিম মহান আল্লাহ পাক উনাকে ও রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গালমন্দ করলে কাফির পরিণত হবে, তার রক্ত হালাল।[আশ-শিফাঃ ২/২৭০]

আরো অনেক আলেম মহান আল্লাহ পাক উনাকে ও রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গালমন্দকারীর কুফরির উপর ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন, যেমন ইব্‌ন হাযম প্রমুখ। অনেক ইমাম গালমন্দকারীকে কাফির বলেছেন, যেমন ইব্‌ন আবি জায়েদাহ ও ইব্‌ন কুদামাহ প্রমুখ। [আল-মুহাল্লা লি-ইব্‌ন হাযমঃ ১১/৪১১, আল-মুগনি লি-ইব্‌ন কুদামাহঃ ৯/৩৩, আস-সারেমুল মাসলুল লি ইব্‌ন তাইমিয়াহঃ পৃষ্টা ৫১২, আল-ফুরু লি-ইব্‌ন মুফলিহঃ ৬/১৬২, আল-ইনসাফ লিল-মুরাদাওয়িঃ ১০/৩২৬, আত-তাজ ওয়াল ইকলিল লিল-মাওওয়াকঃ ৬/২৮৮]

সকল আলেম মহান আল্লাহ পাক উনাকে ও রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গালমন্দকারীর কুফরির উপর একমত। তারা গালমন্দকারীর কোনো অজুহাত গ্রহণ করেননি, কারণ সামান্য জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তিও কোন্‌টি গালি ও কোন্‌টি গালি নয় পার্থক্য করতে সক্ষম, কোন্‌টি প্রশংসা ও কোন্‌টি কুৎসা ভালো করে জানে, তবু ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করে গালমন্দ করে।

ইব্‌ন আবি জায়েদ মালিকিকে জনৈক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যে কোনো ব্যক্তিকে লানত করার সাথে মহান আল্লাহ পাক-কেও লানত করে অজুহাত পেশ করেছে যে, আমার ইচ্ছা ছিল শয়তানকে লানত করা, কিন্তু আমার মুখ ফসকে গেছে। ইব্‌ন আবি জায়েদ উত্তর দিলেনঃ স্পষ্ট কুফরিতে লিপ্ত হওয়ার কারণে তাকে হত্যা করা হবে, তার কোনো অজুহাত গ্রহণ করা যাবে না, মশকরা করে বলুক, অথবা ইচ্ছা করে বলুক।[আশ-শিফা লি-ইয়াদঃ ২/২৭১]

অনুরূপ জাহিরিয়াহ ও চার মাজহাবের আলেম ও বিচারকগণ তাদের মাজহাব মোতাবেক বাহ্যিক দেখে ফতোয়া দেন ও ফয়সালা করেন, তারা আভ্যন্তরীণ অবস্থা আমলে নেন না, যদিও গালমন্দকারী বলে তার গালমন্দ করার ইচ্ছা ছিল না। আলেমগণ যদি বাহ্যিক বিষয়গুলো অন্তরের দাবির কারণে ত্যাগ করেন, যা বাহ্যিকের বিপরীত, তাহলে শরয়ী আহকামের নাম, বিধান, শাস্তি ও হদগুলো বাতিল পরিণত হবে, মানুষের কোনো সম্মান ও অধিকার থাকবে না। কোনো মুসলিমকে কাফের থেকে, কোনো মুনাফিককে মুমিন থেকে পৃথক করা যাবে না। কপট ও অন্তরের ব্যাধিতে আক্রান্ত লোকের মুখে দীন ও দুনিয়া খেলনায় পরিণত হবে।



অনিচ্ছায় গালমন্দ করাও কুফরিঃ

মহান আল্লাহ পাক উনাকে ও রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গালমন্দ করা কুফরি, এতে কোনো দ্বিমত নেই। অনিচ্ছায় অবহেলা প্রকাশ পেয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনাকে ও রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানে খারাপ শব্দ ব্যবহারের ইচ্ছা ছিল না, সাধারণ লোকের এরূপ অজুহাতের কোনো মূল্য নেই। এরূপ অজুহাত মূর্খতার প্রমাণ, জাহাম ইব্‌ন সাফওয়ান ও কট্টর মুরজিয়া ব্যতীত কেউ তা গ্রহণ করার পক্ষে নয়, যারা বলেঃ বিশ্বাস ও অন্তরের জ্ঞানই ঈমান। এটাও ঈমান সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতার প্রমাণ, তারা জানে নাঃ কথা ও কর্মের সমন্বয়ে ঈমান’, অর্থাৎ মুখ ও অন্তর দ্বারা কালিমা শাহাদাতের স্বীকৃতি এবং অন্তর ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা আমল করাকে ঈমান বলা হয়।

কট্টর মুরজিয়াদের দৃষ্টিতে বাহ্যিক আমল ঈমানের দলিল নয়, তাই তারা অন্তর না দেখে ঈমান অস্বীকার করে না, বাহ্যিক কথার বিপরীত হলেও তারা অন্তরের দাবি বিশ্বাস করে। বস্তুত ঈমানের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ দুটি অংশ। উভয়ের নাম ঈমান। একটির অনুপস্থিতিতে অপরটিকে ঈমান বলা হয় না। কাফের যেরূপ কুফরির ইচ্ছা ও নিয়তের কারণে কাফির হয়, যদিও সে মুখে উচ্চারণ না করে, কিংবা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা কাজে পরিণত না করে; সেরূপ কথার কারণে ব্যক্তি কাফির হবে, যদিও সে কুফরির নিয়ত না করে, কিংবা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা কাজে পরিণত না করে। তাই যে কুফরি কাজ করে, সেও কাফির, যদিও সে কুফরির ইচ্ছা না করে, কিংবা মুখে না বলে।

শরীরের কোনো অঙ্গ হারাম কাজে লিপ্ত হলে তার বিচার হবে, তবে অন্তরের বিষয়টি মহান আল্লাহ পাক উনার উপর সোপর্দ। কুফরি প্রকাশ পাওয়ার কারণে যাকে কাফির ফতোয়া দেওয়া হয়, সে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকটও কাফের হবে এরূপ জরুরি নয়, আভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো মহান আল্লাহ পাক উনার উপর সোপর্দ, তবে দুনিয়ায় বাহ্যিক দেখে বান্দার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে, উনার কিতাবের সাথে ও উনার রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে উপহাস করে, মহান আল্লাহ পাক তাকে কাফির বলেছেন, অনিচ্ছার অজুহাত তিনি গ্রহণ করেননি, তিনি ইরশাদ করেনঃ [وَلَئِن سَأَلْتَهُمْ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلْعَبُ قُلْ أَبِاللّهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ لاَ تَعْتَذِرُواْ قَدْ كَفَرْتُم بَعْدَ إِيمَانِكُمْ إِن نَّعْفُ عَن طَآئِفَةٍ مِّنكُمْ نُعَذِّبْ طَآئِفَةً بِأَنَّهُمْ كَانُواْ مُجْرِمِينَ] হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আর যদি আপনি তাদের  কাছে (তাদের কৃত কর্মকান্ড সম্পর্কে) জিজ্ঞেস করেন, তবে তারা বলবে, আমরা তো কথার কথা বলছিলাম এবং হাস্যরস ও কৌতুক করেছিলাম। আপনি বলুন, তোমরা কি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে, উনার হুকুম আহকামের সাথে এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হাসি ঠাট্টা করছিলে? (হে মুনাফিকেরা) ছলনা করে লাভ নাই, তোমরা যে কাফের হয়ে গেছ ঈমান প্রকাশ করার পর (তা পরিষ্কার হয়ে গেছে)। (তাই) যদি আমি তোমাদের থেকে একটি দলকে ক্ষমা করেও দেই, তাহলেও অপর দলকে আযাব দেব। কারণ, তারা হচ্ছে অপরাধী।[সূরাহ তওবা শরীফঃ ৯/৬৫-৬৬]

বিবেকও বলে মানুষকে তার কথার কারণে পাকড়াও করা হোক। মহান আল্লাহ পাক তিনি বিনা দলিলে জিনার অপবাদদাতাকে আশি বেত্রাঘাত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, যদিও সে বলে অপবাদ দেওয়ার ইচ্ছা ছিল না, অনুরূপ তার ঠাট্টা ও মশকরার নিয়ত গ্রহণযোগ্য নয়। কোনো শাসক যদি তার ইজ্জত নিয়ে উপহাস ও ঠাট্টাকারীকে বিনা শাস্তিতে ছেড়ে দেয়, তাহলে তার ভয় মানুষের অন্তর থেকে বিদায় নিবে। তাই আপনি দেখবেন এ জাতীয় অপরাধের কারণে তিনি মানুষকে শাস্তি দিচ্ছেনঃ তারা ইচ্ছায় বলুক বা অনিচ্ছায় বলুক। মানুষকে তার অপরাধ ও জুলমের কারণে পাকড়াও করার বিষয়টি কুরআন ও সুন্নার একাধিক জায়গায় এসেছে। বিবেক এবং কুরআন ও সুন্নায় স্বীকৃত যে, মহান আল্লাহ পাক উনার ও রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মর্যাদা ও সম্মানের ক্ষেত্রে অবহেলাকারীর কোনো অজুহাত গ্রহণ করা হবে না। সহিহ হাদীস শরীফে এসেছে, আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই বান্দা মহান আল্লাহ পাক উনার ব্যপারে এমন সব অপছন্দনীয় বাক্য উচ্চারণ করে, যার পরোয়া সে করে না, তার কারণে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়-হবে।[সহিহ বুখারী শরীফঃ (৬৪৭৮), সহিহ মুসলিম শরীফ (২৯৮৮)।]

এখানে দেখছি, বান্দা উনার কথার কোনো পরোয়া করেনি, এ জন্য মহান আল্লাহ পাক তাকে ছাড় দেননি, বরং তার জন্য তিনি শাস্তি অবধারিত করেছেন। বান্দা তার কথার মূল্য ও তিক্ততা চিন্তা করেনি, অর্থ বুঝতে অবহেলা করেছে। সে যদি উনার কথা চিন্তা করত ও সামান্য ভেবে দেখত, তাহলে তার কথার খারাপি সে বুঝত। বেলাল ইব্‌ন হারেস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেনঃ নিশ্চয় তোমাদের কেউ মহান আল্লাহ পাক উনার রাগ উঠবে এমন বাক্য উচ্চারণ করে, সে চিন্তাও করে না বাক্যটি যেখানে পৌঁছেছে সেখানে সেও পৌঁছাবে, ফলশ্রুতিতে মহান আল্লাহ পাক তার উপর তার সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত স্বীয় রাগ অবধারিত করে দেন।[মুসনাদে আহমদ শরীফঃ ৩/৪৬৯, হাদীস শরীফ নং: ১৫৮৫২, সহিহ ইব্‌ন হিব্বান শরীফ ২৮০]

অতএব মানুষ যতই বলুক যে, মহান আল্লাহ পাক ও রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গালমন্দ করা, লানত করা, হেয় করা অথবা অপমান করার ইচ্ছা ব্যতীত মুখের উপর চলে এসেছে, এ জাতীয় অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়, এটাও তার এক ধরণের বাহানা, যা ইবলিস তার অন্তরে সৃষ্টি করে। ইবলিস এভাবে তাকে কুফরির উপর অটল রাখে, মহান আল্লাহ পাক উনার নাফরমানি ও অবাধ্যতায় তাকে সান্তনা দেয়। বস্তুত শয়তান মানুষকে যখন কুফরির প্রতি উদ্বুদ্ধ করে, সে তার সামনে অসার অযৌক্তিক কতক অজুহাত ও শরয়ী অপব্যাখ্যা তৈরি করে দেয়, যা প্রবৃত্তি মুক্ত সুস্থ বিবেকের সামনে টিকে না। এবং সে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে পৌঁছে যায়।

রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ব্যপারে বেআদবির পরিনাম!

প্রথমতো রাসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক উচ্চারন বা স্মরণ করার আদব রক্ষা করা ফরজ, কারণ মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ [لَا تَجْعَلُوا دُعَاء الرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَاء بَعْضِكُم بَعْضًا]
অর্থঃ (হে ইমানদারগণ) তোমরা একে অপরকে যেভাবে আহ্বান করে থাকো, সেভাবে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আহ্বান করো না। [সূরাহ নূর শরীফঃ ২৪/৬৩]

উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ এর ব্যাখ্যায় তাফসীরগ্রন্থ তাফসীরে আহসানুল বয়ানে আয়াত শরীফের ব্যখায় বলা হয়েছেঃ

[১] এর একটি অর্থ হল, যেভাবে তোমরা একে অপরকে নাম ধরে ডাক, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ঐভাবে ডাকবে না। যেমন ওহে মুহাম্মাদ!না বলে হে মহান আল্লাহ পাকের রসূল! বা হে মহান আল্লাহ পাকের নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইত্যাদি বলে ডাকবে। (এটি ছিল উনার দুনিয়ায় অবস্থান মুবারক-কালীন নির্দেশ; যখন উনাকে সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমদের ডাকার প্রয়োজন হত)। আর দ্বিতীয় অর্থ হল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বদ দোয়া-কে অন্যান্যদের বদ দোয়ার মত ভেবো না। কারণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দু'আ কবুল হয়। অতএব তোমরা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বদ দোয়া-কে গ্রহন করা হতে দূরে থাক; নচেৎ তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে।

এছাড়াও বিশ্ববিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ তাফসীরে জালালাইন শরীফ এর মধ্যে উল্লেখ করা হয় যেঃ [ان تقولوا يا محمد صلى الله عليه وسلم بل قولوا يا نبى الله يا رسول الله فى لين وتواضع وخفض صوت]
অর্থঃ নিশ্চয়ই আপনারা ইয়া মুহম্মদ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলে থাকেন। বরং আপনারা নরম সূরে বিনয়ের সাথে নিম্ন স্বরে ইয়া নাবিয়াল্লাহ”, “ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবিবুল্লাহবলুন। অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক ধরে সাধারণ মানুষের ন্যায় উনাকে সম্বোধন করা যাবেনা। বরং অত্যন্ত আদবের সাথে উনার লক্বব মুবারক নিয়ে সম্বোধন করতে হবে কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনিও হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক নিয়ে সরাসরি সম্বোধন করেননি। বরং বিশেষ বিশেষ লক্বব মুবারক ব্যবহার করেছেন। যেমনঃ [يا ايها المزمل ، يا ايها الرسول، طه ، يس ، يا ايها المدثر] উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অসংখ্য লক্বব মুবারক রয়েছে। তবে যেসব শব্দ উনার শানের খিলাফ বা সাধারণ মানুষের জন্য ব্যবহৃত হয়, এরূপ শব্দাবলিও উনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হারাম কাট্টা কুফুরি। তাছাড়া যে শব্দ ভালো-মন্দ দুই-অর্থেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে সেসব শব্দও উনার শান মুবারক-এ ব্যবহার করা যাবে না। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেনঃ [يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَقُولُواْ رَاعِنَا وَقُولُواْ انظُرْنَا وَاسْمَعُوا ْوَلِلكَافِرِينَ عَذَابٌ أَلِيمٌ] অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! আপনারা رَاعِنَا শব্দ বলবেন না। বরং (رَاعِنَا শব্দের স্থলে) انظُرْنَا শব্দ ব্যবহার করুন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নছীহত মুবারক মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করুন। [পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফঃ আয়াত শরীফ ১০৪]

এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, ‘রয়িনাশব্দ বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বাহ্যত শব্দটির অর্থ হচ্ছে আমাদের প্রতি লক্ষ্য রাখুন বা আমাদের কথা শুনুন। কিন্তু এ শব্দ নির্বোধ ও মুর্খ মেষ সাবক অর্থেও ব্যবহৃত হয়। আবার তা হে আমাদের রাখাল, অর্থও প্রদান করে। তাছাড়া হিব্রু ভাষায় তার প্রতিশব্দ হলো, ‘শুনো তুমি বধির হয়ে যাও। কাফিররা নিজেদের দূরভিসন্ধি বাস্তবায়নের জন্য এরূপ শব্দ ব্যবহার করতো। এ সমস্ত কারনে মহান আল্লাহ পাক তিনি মুমিনদের এমন শব্দ ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেনঃ [يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تُحِلُّواْ شَعَآئِرَ اللّهِ]
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দশনসমূহ উনাদের অসম্মান করো না। (সূরা মায়িদাহ শরীফঃ ৫/২)

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহ পাক উনার সর্বশ্রেষ্ঠ শিয়ার। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক উচ্চারণ করলে অথবা লিখলে অথবা শ্রবণ করলে প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামপাঠ করা অত্যাবশ্যকীয়। কেননা, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেঃ [عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم رغم انف رجل ذكرت عنده فلم يصلى على]
অর্থঃ হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যার নিকট আমার নাম মুবারক উচ্চারণ করা হলো, অথচ সে আমার প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করলো না, তার নাক ধূলায় ধূসরিত হোক অর্থাৎ সে ধ্বংস হোক। (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

সেখানে মিজানুর রহমান আজহারীর বেআদবির কি পরিনতী হতে পারে তা কি ভাবা যায়?

মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেনঃ [يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا لَا تَرْفَعُوٓا أَصْوٰتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِىِّ وَلَا تَجْهَرُوا لَهُۥ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَن تَحْبَطَ أَعْمٰلُكُمْ وَأَنتُمْ لَا تَشْعُرُونَ]
বাংলা অর্থঃ [২] হে ঈমানদার লোকেরা, (তোমরা যখন কথা বলো তখন) তোমাদের আওয়াজ যেনো (আমার) রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আওয়াজ এর চেয়ে উর্ধ্বে না যায়। [১] এবং (তোমরা) নিজেদের মধ্যে একে অপরের সাথে যেভাবে উচ্চস্বরে (বা আদব ছাড়া) কথা বলো, অনুরূপ ভাষায় ও কথা বলনা; এমন যেনো কখনো না হয় যে তোমাদের সকল নেক আমল বা ইবাদত (শুধুমাত্র এই কারনেই) বরবাদ করে দেওয়া হবে, অথচ তোমরা তা জানতেও পারবেনা।

উপরোক্ত সম্মানিত আয়াত শরীফের ব্যখায় তাফসীরগ্রন্থে উল্লেখ আছেঃ

[১] রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মজলিসের এটা দ্বিতীয় আদব ছিলো। যারা রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মজলিসে ওঠাবসা ও যাতায়াত করতেন তাদেরকে এ আদব-কায়দা ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়ার জন্য মহান আল্লাহ পাক এই আয়াত শরীফ নাজীল করেছেন। এর উদ্দেশ্য ছিল রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার সাথে দেখা-সাক্ষাত ও কথাবার্তার সময় যেন ঈমানদাররা উনার সম্মান ও মর্যাদার প্রতি তীক্ষনভাবে লক্ষ্য রাখেন। কারো কণ্ঠ যেন উনার কণ্ঠ থেকে উচ্চ না হয়। রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনাকে সম্বোধন করতে গিয়ে কেউ যেন একথা ভুলে না যায় যে, কার সাথে সে কোন কথা বলছে। তাই সাধারণ মানুষের সাথে যেরূপ কথাবার্তা এবং স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার সাথে কথাবার্তার মধ্যে পার্থক্য থাকতে হবে এবং কেউ রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার সাথে উচ্চস্বরে কথাবার্তা বলবেন না যেমন পরস্পর বিনা দ্বিধায় করা হয়; কারণ তা হলো সবচেয়ে নিকৃষ্ট বে-আদবি ও ধৃষ্টতা দেখানো। আর একারণেই এই আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার পর সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের অবস্থা পাল্টে যায়। উনারা এরপর থেকে খুব আস্তে আস্তে কথা বলতেন। সাবেত ইবনে কায়স রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কণ্ঠস্বর স্বভাবগতভাবেই উচু ছিল। এই আয়াত শরীফ শুনে তিনি ভয়ে সংযত হলেন এবং তখন থেকে চিরদিনের জন্য উনার কণ্ঠস্বর নীচু করলেন।

সূত্রঃ ৪৯/২ [বুখারী শরীফঃ হাদীছ শরীফ নং ৪৮৪৬ এবং মুসনাদে আহমাদঃ শরীফঃ হাদীছ শরীফ নং ৩/১৩৭]

[২] অনুরূপভাবে রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার কোনো সুন্নত মুবারক সম্পর্কে জানার পরেও সেটা মানতে যদি কেউ গড়িমসি বা সামান্যতম অনীহা প্রকাশ করে তাহলে তাও চরম বে-আদবি। এ আয়াত শরীফ এর নিষেধাজ্ঞার অধীন। রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার হুজরা মোবারকের সামনেও বেশি উঁচুস্বরে সালাম ও কালাম করা নিষিদ্ধ ছিলো, রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার সম্মান ও আদব উনার বিছাল শরীফের (ওফাতের) পরও দুনিয়ার জমিনের ন্যায় ওয়াজিব। তাই উনার পবিত্র রওজা শরীফের সামনেও বেশী উচুস্বরে সালাম ও কালাম করা আদবের খেলাফ (এবং যারা ওয়াজ মাহফিলে ও বেয়াদবের মতো সম্বোধন করে তারাও এই হাদীছ শরীফের অন্তর্ভুক্ত)। হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম দুই ব্যক্তিকে মসজিদে নববী শরীফে উচ্চস্বরে কথা বলতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কোথাকার লোক? তারা বললেন আমরা তায়েফের লোক। তিনি বললেন, যদি তোমরা মদীনাবাসী হতে তবে আমি তোমাদের বেত্ৰাঘাত করতাম। তোমরা রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার মসজিদে উচ্চস্বরে কথা বলছ কেন?

সূত্রঃ [বুখারী শরীফঃ হাদীছ শরীফ নং ৪৭০]

সুতরাং যারা রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনাকে, সাধারণ মানু‌ষের মতো, উনি মাটির, উনি হাজির নাজির নন, উনার ছায়া ছিলো, উনি ইলমে গাইবের অধিকারী নন, বা উনার সম্পর্কিত যেকোনো কিছুতে বেয়াদবি করে তারা সবাই যেনো জেনে রাখা প্রয়োজন যে, তাদের আক্বীদাহ তো বরবাদ হয়ে গেছে, আছে কেবল সামান্য কয় বছরের আমল যেগুলোর বড়াইও তারা করছে, সেগুলি ও যে কখন নাই হয়ে যাবে তাদের বেয়াদবি আচরণের কারনে তারা তা জানতেও পারবেনা।

উম্মুল মুমিনিন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের ব্যপারে!

অন্যান্য মহিলাদের ব্যাপারে যে সমস্ত শব্দ বলা যায়ঃহযরত উম্মাহাতুল মুমিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শানে সেসমস্ত বাক্য প্রয়োগ করা যায় কি না।

এই ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনি হযরত উম্মাহাতুল মুমিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শানে মুবারক আয়াত নাযিল করে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিলেনঃ [يا زوجات الرسول! أنت لست مثل النساء الأخريات ؛]
অর্থঃ হে নবী পত্নীগণ! আপনারা অন্য নারীদের মত নন। [সূরাহ আল আহযাব শরীফঃ ৩৩/৩২] অর্থাৎ হযরত উম্মুল মুমিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা যমিনের কোন মহিলাদের মত নন। উনাদের মর্যাদা সমস্ত মুমিন মহিলাদেরও ঊর্ধে।

হাদীছ শরীফে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের (উম্মুল মুমিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারাও আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত) স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেনঃ [أذكركم الله في أهل بيتي]
অর্থঃ আমি তোমাদেরকে আমার আহলে বাইতের ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। [সহীহ মুসলিম শরীফ, হাদীছ শরীফ নং ২৪০৮]

মহান আল্লাহ পাক তিনি উম্মুল মুমিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের পবিত্রতা ঘোষণা করে জানিয়ে দিয়েছেনঃ [يا عائلة النبي! الله يريد فقط إزالة الشوائب منك وتنقيتك تمامًا]
অর্থঃ হে (সম্মানিত) নবী পরিবার! (আহলে বাইত) মহান আল্লাহ পাক তো শুধু চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে। [সূরা আহযাব শরীফঃ ৩৩/৩৩]

এরপরেও যারা উম্মুল মুমিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অন্যান্য মহিলাদের মত মনে করে উনাদের সমালোচনা করে তারা নিঃসন্দেহে পথভ্রষ্ট জাহেল।

এবার আসুন দেখি রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত খাদিজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার শান-মানে কি ইরশাদ মুবারক করেছেন।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ [حدثنا هارون بن إسحق حدثنا عبدة بن سليمان عن هشام بن عروة عن أبيه عن عائشة قالت ما غرت على امرأة قط ما غرت على خديجة مما رأيت من ذكر رسول الله صلى الله عليه وسلم لها ولقد أمره ربه أن يبشرها ببيت في الجنة من قصب يعني من ذهب قاله ابن ماجة]
অর্থঃ হযরত আয়িশা আলাইহাস সালাম উনার উনার থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি হযরত খাদিজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার উনার ক্ষেত্রে যে আত্মমর্যাদাবোধ উপলব্ধি করতাম, তদ্রূপ অপর কোন নারীর ক্ষেত্রে অনুভব করতাম না। কেননা আমি রসূলাল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনাকে প্রায়ই হযরত খাদিজা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার উনার কথা উল্লেখ করতে দেখেছি। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার জন্য জান্নাতে স্বর্ণ নির্মিত একটি প্রাসাদের সুসংবাদ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
[সহীহ বুখারী শরীফ ৩৮১৬, সহীহ মুসলিম শরীফ ২৪৩৪, ২৪৩৫, সহীহ তিরমিযী শরীফ ২০১৭, ৩৮৭৫, ৩৮৭৬, সহীহ আহমাদ শরীফ ২৩৭৮৯, ২৫১৩০, ২৫৮৪৭, সহীহ বায়হাকী শরীফ ৭/৪১২]

হযরত খাদিজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত আম্মাজান আলাইহাস সালাম এবং হযরত হাসান-হুসাইন আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত নানীজান আলাইহাস সালাম। আর হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছেঃ [فاطمة هي زعيمة نساء الفردوس وحسن وحسين قادة شباب الجنة]
অর্থঃ ফাতিমাহ আলাইহাস সালাম তিনি জান্নাতের নারীদের নেত্রী এবং হাসান ও হুসাইন আলাইহিমুস সালাম জান্নাতের যুবকদের নেতা। (জামে আত তিরমিজি, হাদীছ নং ৩৭৮১)

এতএব উনাদের শানে বাজে শব্দ ব্যবহার, কটূক্তি ঈমান ধ্বংসের কারণ বলেই প্রমাণিত হলো।

খোলাফায়ে রাশেদিন ও সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের মদুড়ি বলার ব্যপারে!

মিজানুর রহমান আজহারী বলেছে মাওলা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম মদ পান করে সূরা কাফিরুন ভুল পাঠ করেছেন। নাউযুবিল্লাহ!!! যখন আম জনতা সেটার প্রতিবাদ করলো। সে মূহূর্তে কিছু মিজান ভক্ত মিজানের বক্তব্য সঠিক প্রমাণের জন্য সূরাহ নিছা শরীফের ৪৩ নং আয়াত শরীফের শানে নযূল আর তিরমিযী শরীফের কিতাব থেকে একটা হাদীছ শরীফের সম্পর্কহীন দলীল দেয়ার চেষ্টা করলো। নাউযুবিল্লাহ!!!

উল্লেখ্য যে, নিসা শরীফের ৪৩ নং আয়াত শরীফখানার শানে নুযূলে মাওলা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম সূরা কাফিরূণ যোগ-বিয়োগ করে পড়েছিলেন বলে যে বর্ণনা এসেছে, তাতে সনদ ও মতনে পরস্পর বিরোধিতা রয়েছে। এ বিষয়ে হযরত ইমাম মুনযেরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, অন্য সনদে এসেছে যে, সুফিয়ান সওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আবু জাফর রাযী আত্বা ইবনুস সায়েব রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণনা করেছেন। অথচ এখানে এসেছে, হযরত সুফিয়ান সাওরী রহিমাহুল্লাহ আত্বা ইবনুস সায়েব রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন।

মতনে ইখতেলাফ এই যে, আবু দাঊদ শরীফের বর্ণনায় ৩৬৭১ নং হাদীছ শরীফে এসেছে যে, মাওলা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম ও হযরত আব্দুর রহমান বিন আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জনৈক আনছার ছাহাবী দাওয়াত দেন। অতঃপর খাওয়া দাওয়ার পরে মাওলা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম মাগরিবের ছলাতে ইমামতি করেন ও সূরা কাফেরূণে ভুল করেন (নাউযুবিল্লাহ)

অন্যদিকে তিরমিযী শরীফের বর্ণনায় ৩০২৬ নং হাদীছ শরীফে এসেছে, হযরত আব্দুর রহমান বিন আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মওলা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনাকে দাওয়াত দেন। যেখানে উনাকে ইমামতিতে এগিয়ে দেয়া হয় এবং তিনি সূরা কাফেরূণে ব্যাতিক্রম পড়েন।

নাসাঈ শরীফে এসেছে ইমামতি করেন হযরত আব্দুর রহমান বিন আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।

আল-বাযযার এর বর্ণনায় এসেছে, তারা জনৈক ব্যক্তিকে নির্দেশ দেন ও তিনি ছলাতে ইমামতি করেন। বর্ণনায় উক্ত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়নি। অন্য হাদিছ শরীফে এসেছে [فَتَقَدَّمَ بَعْضُ الْقَوْمِ فَصَلَّى بِهِمْ] কওমের জনৈক ব্যক্তি এগিয়ে যান ও ইমামতি করেন। [আওনুল মাবূদ ৩৬৫৪]।

ইবনু জারীরের বর্ণনায় এসেছে, আব্দুর রহমান বিন আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইমামতি করেন এবং আয়াত শরীফ গোলমাল করে পড়েনঃ [أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُوْنَ- وَأَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَا أَعْبُدُ] আমি ইবাদত করি যাদের তোমরা ইবাদত কর এবং তোমরা ইবাদত কর আমি যার ইবাদত করি। (ইবনু জারীর ৯৫২৫)।

ইমাম হাকেম রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, মাওলা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম বলেনঃ [دَعَانَا رَجُلٌ مِنْ الْأَنْصَارِ قَبْلَ تَحْرِيمِ الْخَمْرِ فَحَضَرَتْ صَلاَةُ الْمَغْرِبِ فَتَقَدَّمَ رَجُلٌ فَقَرَأَ: قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ فَأُلْبِسَ عَلَيْهِ، فَنَزَلَتْ لاَ تَقْرَبُوا الصَّلاةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَى حَتَّى تَعْلَمُوا مَا تَقُولُونَ الآية- هذا حديث صحيح ولم يخرجاه- وقال الذهبي : صحيح]
অর্থঃ আমাদেরকে জনৈক আনসার ব্যক্তি দাওয়াত দেন মদ হারাম হওয়ার পূর্বে। এমন সময় মাগরিবের ছলাতের ওয়াক্ত হয়ে যায়। তখন জনৈক ব্যক্তি এগিয়ে যায় ও ছলাতে সূরা কাফিরূণ পাঠ করে। কিন্তু তাতে যোগ-বিয়োগ করে। তখন নাজিল হয় সূরা নিসা শরীফের ৪৩ নং আয়াত শরীফের প্রথমাংশ। ইমাম হাকেম বলেন, হাদীসটি সহীহ। কিন্তু ইমাম বুখারী ও মুসলিম তা বর্ণনা করেননি। ইমাম যাহাবীও হাদীসটিকে সহীহবলেছেন

উপরোক্ত বর্ণনা সমূহে থেকে বোঝা যায় মূল উক্ত নামায হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম ইমামতি করছিলেন না বরং হযরত আব্দুর রহমান বিন আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বা অন্য কোন ব্যক্তি সে নামাযের ইমামতি করেন।

শুধুতাই নয় ইমাম হাকেম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুস্তাদরাকের ২/৩৬৬ : হাদীছ ৩২৫৯ উল্লেখ করে এ বিষয়ে সমাধান দিয়ে বলেনঃ [وَفِي هَذَا الْحَدِيثِ فَائِدَةٌ كَبِيرَةٌ وَهِيَ أَنَّ الْخَوَارِجَ تَنْسُبُ هَذَا السُّكْرَ وَهَذِهِ الْقِرَاءَةَ إِلَى أَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ دُونَ غَيْرِهِ وَقَدْ بَرَّأَهُ اللهُ مِنْهَا فَإِنَّهُ رَاوِيُ الْحَدِيْثِ]
অর্থঃ অত্র হাদিসে বহু ফায়েদা রয়েছে। আর তা এই যে, খারেজীরা এই মাতলামি ও এই ক্বিরাআতে যোগ-বিয়োগ হওয়াকে মাওলা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম এর দিকে সম্বন্ধ করে, অন্যের দিকে নয়। অথচ মহান আল্লাহ পাক উনাকে এই দোষ থেকে মুক্ত করেছেন। কেননা তিনিই এই হাদিসের রাবী

নামাজে যিনি ইমামতি করেছিলেন তিনি ছিলেন হজরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। যার ভুল আয়াত তিলাওয়াতের প্রেক্ষাপটে সূরাহ নিসার আয়াত শরীফ “ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানু লা তাকরাবুস ছলাতা ওয়া আনতুম সুকারা... হে ঈমাণদারগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাকতখন নামাযের ধারে-কাছেও যেওনাযতক্ষণ না (তোমরা) বুঝতে সক্ষম হও যে তোমরা কি পাঠ করিতেছ (সূরাহ আন নিসা শরীফঃ /৪৩) নাজিল হয়েছে। এই সংক্রান্ত অন্যান্য হাদীস শরীফ গুলোর আলোকে গবেষণা করলে আপনি জানতে পারতেন যেমাওলা হযরত আলি কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম খোদ এই হাদীসখানার বর্ণনাকারী। তিনি মদপান করেন নাই এতেই প্রমান হয়ে যায়। [তথ্যসূত্রঃ ইমাম হাকিম নিশাপুরি রহমতুল্লাহি আলাইহিওফাত ৪০৫ হিজরিউনার সংকলিত বিখ্যাত হাদীস শরীফের কিতাব "আল মুস্তাদারেক আলাস সাহিহাইন" এর ৩১৯৯ নং হাদীস শরীফ ২য় খন্ড ৩৩৬ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্যতিনি স্পষ্ট বলেছেন খারেজিরা এই হাদীস শরীফের ইমামতি মাওলা হযরত আলি কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ওয়া আলাইহিস সালামের দিকে লাগিয়ে দিয়েছে। অথচ মাওলা হযরত আলি কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ওয়া আলাইহিস সালাম নামাজ পড়ান নাই এবং মদও পান করেন নাই। সালাফিদের শায়খ ইবনে তাইমিয়ার ছাত্র ইমাম জাহাবি রহমতুল্লাহি আলাইহিও এই হাদীস শরীফকে সহিহ বলেছেন]।

এর চাইতেও আরো শক্তিশালী সনদে তিরমিজি শরীফআবু দাউদ শরীফনাসাই শরীফ ও মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রেওয়ায়াতে এসেছে যেমদের হুকুম সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা নাজিল সংক্রান্ত হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ওয়া আলাইহিস সালামের দোয়া ও আরজির প্রেক্ষাপটে সূরাহ নিসার এই আয়াতখানা "লা তাকরাবুস ছলাতা ওয়া আনতুম সুকারা" নাজিল হয়েছে। এই আয়াত শরীফ নাজিলের ঘটনার সাথে মূলত সাহাবাগনের মদপানের সেই ঘটনার আদৌ কোন সম্পর্ক নেই।

মাওলা হযরত আলি কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম যিনি জীবনে কোনদিন কোন মূর্তির সামনে মাথা নত করেন নাইযিনি নামাজ ফরজ হওয়ার আগে থেকেই হুজুরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পেছনে আম্মাজান খাদিজাতুল কুবরা আলাইহাস সালামের সাথে জামায়াতের সাথে নামাজ পড়ে অভ্যস্ত। যখন দুনিয়ার বুকে এই তিনজন ছাড়া আর কেউ নামাজ পড়তেন না। নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আহলে বাইতের অন্যতম প্রধান সদস্য যিনি মাওলা হযরত আলি কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালামযাদেরকে সকল গোনাহ থেকে মাহফুজ রাখার ঘোষণা খোদ কুরআন মাজিদে এসেছে (সূরাহ আহজাব শরীফের ৩৩/৩৩) সেই মাওলায়ে মুমিনিন কখনো মদ্যপ্য হয়ে নামাজে দাঁড়াতে পারেন মদপান হারাম হওয়ার আগে? পরের তো প্রশ্নই আসে না। মাওলায়ে কায়েনাতের পুরো জীবন ছিল নিষ্কলুষ পূত ও পবিত্র।

মিজানুর রহমান ভাল বক্তা হতে পারেকিন্তু দ্বীনের ব্যাপারে ব্যুতপত্তি অর্জন বা গভীর ইলমি অনুসন্ধানে সে ব্যর্থ। আগেও অনেকবার প্রমাণ সে দিয়েছেএবারো দিলো।

সূতারং প্রমাণ হলো আমীরুল মুমিনিন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম সর্ম্পকে যে অভিযোগ তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

মিজানুর রহমান আযহারী সে কিসের আজহার থেকে লেখাপড়া করেছে। একটা সাংঘর্ষিক বর্ণনা যা কখনোই দলীল হিসাবে উপস্থাপন করা যায় না সে বর্ণনা দিয়ে সে আহলে বাইতে রসূলকে মাতাল বলার দলীল দিচ্ছে। আসতাগফিরুল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! সেই সাথে খারেজীদের দ্বারা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার দিকে সমন্ধ করা একটা বর্ণনা দিয়ে কোন সাহসে দলীল দিলো? সে কি মনে করেছে তার এসব দুই নম্বরীর জবাব দেয়ার মানুষ দুনিয়ায় নেই?

যেখানে আহলে বাইত শরীফ উনাদের পবিত্র বলে কুরআনে পাকে ঘোষনা দেয়া হয়েছে কি করে তাহলে উনাদের পবিত্রতার খেলাপ কথা বলা যেতে পারে?

পরিশেষে একটি হাদীস শরীফ দিয়ে শেষ করছিঃ বুখারি শরিফের হাদীস নং-৩৬১০মুসলিম শরিফের হাদীস নং- ১০৬৪) যেই হাদীস শরীফখানা ঘুরেফিরে বার বার এসেছেজুল খুয়াইসরা আত তামিমি সম্পর্কে। যে কালিমাতে বিশ্বাসী মুসলমান ছিলনামাজ পড়ত অনেক বেশিকুরআন মাজিদ তিলাওয়াত করত অনেক বেশিবাহ্যিক সুন্নাতের অনুসরণ করত অনেক বেশি। কিন্তু প্রিয় নবিজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নাম ধরে ডেকে সে আদেশ দিয়েছিল এই বলে, "হে মুহাম্মাদ আপনি ন্যায়বিচার করুন!" সাথে সাথে খারেজিদের পূর্বপুরুষে পরিণত হয়েছে। হজরত আবু সায়িদ খুদরি রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম থেকে অনেক অনেক সনদে ও রেওয়ায়াতে এসেছে এই হাদীস শরীফখানা।

মিজানুর রহমান আজহারী সহ তার সকল অনুসারী যে খারেজি হয়ে গেছে, আল্লাহ পাক, রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উম্মুল মুমিনিন আলাইহিন্নাস সালাম, খোলাফায়ে রাশেদিন আলাইহিমুস সালাম, সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, তাবেঈ তবে তাবেঈন রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের শানে আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করে, মনগড়া কিচ্চা কাহিনী বলে মুরতাদ তথা কাফেরে পরিনত হয়েছে সে ও তার অনুসারীগণ এতে কোন সন্দেহ নাই।

রাজীব খাজা, সম্পাদক সুবহে সাদিক, ইস্তানবুল তুরস্ক।


শেয়ার করুন

5 comments:

  1. তোরা যারা সব কিছু বুঝেও বানায় চুরায় মিজানুর রহমান আজহারীর বিরুদ্ধে লেগেছিস ভারতের পা-চাটা কুত্তারা, তারা অবশ্যই আল্লাহর দরবারে জবাব দিতে হবে। আমরা ভাল করেই জানি এদেশে কেউ সঠিক ভাবে ইসলামের পথে কাজ করলে তোরা শয়তানের বাচ্ছারা তার বিরুদ্ধে লাগবি।কিন্তু যদি কোন ভন্ড, হি, বা চেতনাবাজ কেউ আমার নবী রাসুলকে গালি দেয় তখন তোদের আর খুজে পাওয়া যায় না

    ReplyDelete
    Replies
    1. ইহুদীদের দালালি ছেড়ে তওবা করে মুসলিম হও, ভারতীয় মুশ্রিকদের তোরাই পা চাটা গোলাম।

      Delete
  2. তোদের বিরুদ্ধে যারাই বলে তারাই খারাপ হয়ে যায়। তাকে কাফের বলে তোরা কাফের হয়ে গেছিস। ঐ শয়তানের চেলারা কুফর ভালো করে বুঝায়ে দে বাংলার মানুষকে, তারপর বুঝবো কাফের কে আর মুসলিম কে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ইহুদীদের দালালি ছেড়ে তওবা করে মুসলিম হও, ভারতীয় মুশ্রিকদের মতো মানুষ পূজা বাদ দে, মিজান পূজার ফল জাহান্নাম ছাড়া কিছুই নয়। আর মূর্খদের জন্য ইসলাম ধর্ম নয়।

      Delete