Tuesday, January 14, 2020

উত্তম চরিত্রবান ধার্মিক সন্তান লাভের জন্য ইসলামিক নিয়মে স্ত্রী সহবাস ও তাঁর দোয়া


মহান আল্লাহ পাক বিবাহের মাধ্যমে নারী-পুরুষের যৌন আকাংখা ও বংশ বৃদ্ধিকে কল্যাণের কাজে পরিণত করেছেন। বিবাহের ফলে স্বামী-স্ত্রীর যাবতীয় বৈধ কার্যক্রম হয়ে ওঠে কল্যাণ ও ছাওয়াবের কাজ। শারীরিক মিলনের তৃপ্তি পাওয়া ও বংশবৃদ্ধির একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর সহবাস। এর রয়েছে কিছু নিয়ম-নীতি ও দোয়া। সুবহে সাদিকের পাঠকের জন্য তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো-

সহবাস শুরু করার পূর্বে এই দোয়া পড়তে হবেঃ [بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا] উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়ত্বানা ওয়া জান্নিবিশ শায়ত্বানা মা রাযাক্বতানা।
বঙ্গানুবাদঃ- আমি মহান আল্লাহ পাক উনার নামে শুরু করছি, হে মহান আল্লাহ! পাক আমাদেরকে আপনি দয়াকরে নাপাক ইবলিশ শয়তান থেকে দূরে রাখবেন এবং আমাদেরকে আপনি যা হাদিয়া করবেন (মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবেন) তা থেকেও ইবলিশ শয়তানকে দূরে রাখবেন।

কিতাব সূত্রঃ সহীহ বুখারীঃ হাদিস শরীফ নং ৪৭৮৭।

সাদ ইবনে হাফ্স রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নাবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন স্ত্রী-সহবাস করে, তখন যেন সে বলে, ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনিশ শায়ত্বানা ওয়া জান্নিবিশ শায়ত্বানা মা রাযাকতানা অর্থাৎ - আমি মহান আল্লাহ পাক উনার নামে শুরু করছি, হে মহান আল্লাহ! পাক আমাদেরকে আপনি দয়াকরে নাপাক ইবলিশ শয়তান থেকে দূরে রাখবেন এবং আমাদেরকে আপনি যা হাদিয়া করবেন (মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবেন) তা থেকেও ইবলিশ শয়তানকে দূরে রাখবেন। এরপরে যদি তাদের দুজনের মাঝে কিছু ফল দেয়া হয় অথবা বাচ্চা পয়দা হয়, তাকে শয়তান কখনো ক্ষতি করতে পারবে না।

কিতাব সূত্রঃ আবু দাউদ শরীফঃ হাদিস শরীফ নং ৩৪৫।

মুহাম্মাদ ইবনে হাতেম আওস ইবনে আওস আছ-ছাকাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি জুমুআর দিন গোসল করাবে (অর্থাৎ জুমুআর নামাযের পূর্বে স্ত্রী সহবাস করে তাকেও গোসল করাবে) এবং নিজেও গোসল করবে অথবা সুগন্ধিযুক্ত দ্রব্যাদি দ্বারা ভালরূপে গোসল করবে, অতঃপর সকাল-সকাল মসজিদে গিয়ে ইমামের নিকটবর্তী স্থানে বসে খুতবা শুনবে এবং যাবতীয় অপ্রয়োজনীয় ক্রিয়াকর্ম হতে বিরত থাকবে, তার মসজিদে যাওয়ার প্রতিটি পদক্ষেপ সম্মানিত সুন্নত হিসাবে পরিগণিত হবেন। তার প্রতিটি পদক্ষেপ এক বছরের সমান দিনের রোযা এবং রাতে দাঁড়িয়ে তাহাজ্জ্বুদের নামায আদায়ের ছওয়াবের সমতুল্য হবেন।

উত্তম বাচ্চা পাওয়ার আশা করলে যখন বীর্যপাত হবে তখন বীর্য যাওয়ার প্রাক্বালে স্বরন করে নিচের দোয়াটি পাঠ করবেন, তাহলে ইবলিশ আপনার সহবাসে শরীক হবেনা।

আরবিঃ [اللّهُمَّ لآ تَجْعَلْ لِلشَّيْطَانِ فِيْمَا رَزَقْتَنِيْ نَصِيْبًا]
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা লা তাজআল-লিশ্শাইতানি ফিমা রাযাকতানী নাসীবান।
অর্থঃ হে মহান আল্লাহ পাক, যে সন্তান আপনি আমাদেরকে দান করবেন তার মধ্যে শয়তানের কোন অংশ দয়াকরে রাখবেন না।

সহবাস করার কিছু নিয়ম কানুনঃ-

>> স্বামী-স্ত্রী উভয়ই পাক পবিত্র থাকবে।
>> সহবাসের পূর্বে সুগন্ধি ব্যবহার করা। যা মহান আল্লাহ পাক উনার রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত।
>> সন্তানের জন্য রাত্রী দ্বি-প্রহরে সহবাস করা সর্বোত্তম।
>> সহবাসের প্রথমে দোয়া পড়া।
>> সহবাস করার সময় নিজের স্ত্রীর রূপ দর্শন, শৃঙ্গার অ শরীর স্পর্শন ও সহবাসের সুফলের প্রতি মনো নিবেশ করা।
>> স্ত্রীর লজ্জাস্থানের দিকে চেয়ে সহবাস না করা, ইহাতে চোখের জ্যোতি নষ্ট হয়ে যায়।
>> অন্য কোনো সুন্দরি স্ত্রী লোকের বা অন্য সুন্দরী বালিকার রুপের কল্পনা না করা।
>> সহবাসের সময় কথা কম বলা।
>> প্রত্যেকবার সহবাস করার পরে গোসল করা। সম্ভব না হলে নাপাক অংগ ধৌত করে অজু করে নেওয়া।

সহবাসে নিষিদ্ধতাঃ-

>> পুরোপুরি অন্ধকার ঘরে, ক্ষুদ্র বা নোংরা জায়গায় স্ত্রী সহবাস না করা। করলে চিরতরে স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যাবে।
>> ফলবান গাছের নিচে সহবাস না করা।
>> সন্তান লাভের উদ্যেশ্যে রবিবারে (শনিবার মাগরিবের আযানের পর থেকে রবিবার মাগরিবের আযানের আগ পর্যন্ত) সহবাস না করা। ঐ দিনের সহবাসের বাচ্চা যালিম অথবা হত্যাকারী হয়।
>> সন্তান লাভের উদ্যেশ্যে বুধবারে (মঙ্গলবার মাগরিবের আযানের পর থেকে বুধবার মাগরিবের আযানের আগ পর্যন্ত) সহবাস না করা। ঐ দিনের সহবাসের বাচ্চা যালিম অথবা হত্যাকারী হয়।
>> সন্তান লাভের উদ্যেশ্যে চন্দ্র মাসের প্রথম এবং পনের তারিখ রাতে সহবাস না করা।
>> বিদেশ বা সফরে যাওয়ার আগের রাতে স্ত্রী সহবাস না করা।
>> সন্তান লাভের উদ্যেশ্যে জোহরের নামাজের পরে সহবাস না করা।
>> নাপাক শরীরে বা স্বপ্নদোষের পর গোসল না করে স্ত্রী সহবাস না করা।
>> পূর্ব-পশ্চিম দিকে শুয়ে সহবাস না করা।
>> রোগ্ন অবস্থায় সহবাস না করা। তাতে রোগ আরো বেড়ে যায় এবং শরীরের ক্ষতি হয়।
>> শরীরে জ্বর ও বেশি গরমে স্ত্রী সহবাস পাগল করে দেয়। তখন সহবাস না করা।
>> বৃদ্ধা ও বারবনিতার সঙ্গে সহবাস না করা। তাতে আয়ু কমে যায়।।
>> হায়েজের অবস্থায় স্ত্রী সহবাস না করা। করলে স্বামী স্ত্রী দুই জনেই রোগ হতে পারে।
>> নিকৃষ্ট স্ত্রীর সাথে সহবাস না করা। করলে নিকৃষ্ট সন্তান জম্ম লাভ করে।
>> ভরা পেটে স্ত্রী সহবাস না করা। করলে কঠিন রোগ হয়।
>> ভীষণ ক্ষুধার সময় স্ত্রী সহবাস না করা। করিলে লিঙ্গ শিথিল হয়ে যায়।

>> সহবাস সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদীস <<

>> সহীহ বুখারী শরীফঃ হাদীস শরীফ নং ৩০৯৪।

ইবনে সালাম রহমতুল্লাহি আলাইহি আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর কাছে রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মদিনা শরীফের আগমনের খবর পৌঁছল, তখন তিনি উনার কাছে আসলেন। এরপর তিনি বলেছেন, আমি আপনাকে এমন তিনটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে চাই যার উত্তর নাবী আলাইহিমুস সালাতু ওয়া সালাম ছাড়া আর কেও অবগত নন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন কি? আর সর্বপ্রথম খাবার কি, যা জান্নাতবাসী খাবে? আর কি কারণে সন্তান তার পিতার সাদৃশ্য লাভ করে? আর কিসের কারণে (কোন কোন সময়) তার মামাদের সাদৃশ্য হয়? তখন রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এইমাত্র জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম আমাকে এ বিষয়ে অবহিত করেছেন। রাবি বলেন, তখন আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তিনি তো ফিরিস্তাগণের মধ্যে ইহূদীদের শত্রু। রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন হল আগুন যা মানুষকে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে তাড়িয়ে নিয়ে একত্রিত করবে। আর প্রথম খাবার যা জান্নাতবাসীরা খাবেন তা হল মাছের কলিজার অতিরিক্ত অংশ। আর সন্তান সাদৃশ্য হওয়ার রহস্য এই যে পুরুষ যখন তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তখন যদি পুরুষের বীর্যে পূর্বে স্খলিত হয় তখন সন্তান তার সাদৃশ্যতা লাভ করে। তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি-নিঃসন্দেহে আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এরপর তিনি বললেন, ইয়া রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ইহূদীরা অপবাদ ও কুৎসা রটনাকারী সম্প্রদায়। আপনি তাদেরকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করার পূর্বে তারা যদি আমার ইসলাম গ্রহণের বিষয় জেনে ফেলে, তাহলে তারা আপনার কাছে আমার কুৎসা রটনা করবে। তারপর ইয়াহূদিরা এলো এবং আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর ঘরে প্রবেশ করল। তখন রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনে সালাম কেমন লোক? তারা বলল, তিনি আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যাক্তি এবং সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যাক্তির পুত্র। তিনি আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যাক্তি এবং সর্বোত্তম ব্যাক্তির পুত্র। তখন রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইসলাম গ্রহন করেন, এতে তোমাদের অভিমত কি হবে? তারা বলল, এর থেকে আল্লাহ পাক তাঁকে রক্ষা করুন। এমন সময় আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাদের সামনে বের হয়ে আসলেন এবং বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মহান আল্লাহ পাক ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহ পাক-এর রসূল। তখন তারা বলতে লাগল, সে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যাক্তি এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যাক্তির সন্তান এবং তারা তাঁর গীবত ও কুৎসা রটনায় লিপ্ত হয়ে গেল।

>> সহীহ বুখারী শরীফঃ হাদীস শরীফ নং ৪১৭১।

ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি নাফি রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতেন তখন কুরআন শরীফের তিলাওয়াত হতে অবসর না হয়ে কোন কথা বলতেন না। একদা আমি সূরা বাকারা শরীফ পাঠ করা অবস্থায় উনাকে পেলাম। পড়তে পড়তে তিনি এক স্থানে পৌঁছলেন। তখন তিনি বললেন, আপনি কি জানেন, কি উপলক্ষ্যে এ আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছেন? আমি বললাম, না। তিনি তখন বললেন, অমুক অমুক ব্যাপারে আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছেন। তারপর আবার তিনি তিলাওয়াত করতে থাকেন। আবদুস সামাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার কাছে হাদীস শরীফ বর্ণনা করেন আমার পিতা, তিনি বলেন, আমার কাছে হাদীস শরীফ বর্ণনা করেন আইয়ুব রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি নাফি রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, নাফি রহমতুল্লাহি আলাইহি ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে। অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন করতে পার। (২/২২৩)। রাবী বলেন, স্ত্রীলোকের কেবলা সম্মুখ দিয়ে নয় পশ্চাৎ দিক দিয়েও সহবাস করতে পারে। মুহম্মদ ইবনে ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পিতা থেকে, তিনি উবায়দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি নাফি রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, নাফি রহমতুল্লাহি আলাইহি ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন।

>> সহীহ বুখারী শরীফঃ হাদীস শরীফ নং ৪১৭২।

আবূ নুআইম রহমতুল্লাহি আলাইহি জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইহুদীরা বলতো যে, যদি কেউ স্ত্রীর পেছন দিক থেকে সহবাস করে তাহলে সন্তান টেরা চোখের হয়। তখন (তাদের এ ধারণা রদ করে) আয়াত শরীফ নাজিল হয় মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে।

বিঃদ্রঃ পেছন দিক থেকে বলতে আবার কেউ যেন পায়খানার রাস্তা না মনে করে।

>> সহীহ বুখারী শরীফঃ হাদীস শরীফ নং ৪৩২৪।

হাসান ইবনে মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি মুহম্মদ ইবনে আব্বাস ইবনে জাফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে এমনিভাবে পড়তে শুনেছেন, (১১:৫) জেনে রাখ, নিশ্চয়ই তারা নিজেদের বক্ষদেশ ঘুরিয়ে দেয় যেন মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট হতে লুকাতে পারে। শুন, তারা তখন কাপড়ে নিজেদেরকে আচ্ছাদিত করে, তিনি তখনও জানেন যা কিছু তারা চুপিসারে বলে আর প্রকাশ্যভাবে বলে। নিশ্চয় তিনি জানেন যা কিছু অন্তর সমূহে নিহিত রয়েছে। "মুহম্মদ ইবনে আব্বাস বলেন, আমি উনাকে এর মর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, কিছু লোক খোলা আকাশের দিকে উন্মুক্ত হওয়ার ভয়ে পেশাব-পায়খানা অথবা স্ত্রী সহবাস করতে লজ্জাবোধ করতে লাগল। তারপর তাদের সম্পর্কে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়।

>> সহীহ বুখারী শরীফঃ হাদীস শরীফ নং ৪৩২৫।

ইবরাহীম ইবনে মূসা রহমতুল্লাহি আলাইহি মুহম্মদ ইবনে আব্বাস ইবনে জাফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত যে, ইবনে আববাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পাঠ করলেন। আমি বললাম, হে আবূল আব্বাস, এর দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে? তিনি বললেন, কিছু লোক পেশাব-পায়খানা (করার) সময় অথবা স্বীয় স্ত্রীর সাথে সহবাসের সময় (লজ্জাস্থান ব্যতীতও উলঙ্গ হতে) লজ্জাবোধ করত, তখন এই আয়াত শরীফ অবতীর্ণ হয়।

>> সহীহ বুখারী শরীফঃ হাদীস শরীফ নং ৪১৩৯।

আবূ রাবী আতাকী ও আবূ কামিল জাহদারী ও ফোযায়েল ইবনে হুসাইন রহমতুল্লাহি আলাইহিম আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ সুলায়মান (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ষাটজন সহধর্মিনা ছিলেন। একদা তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই আমি অদ্য রজনীতে সকল স্ত্রীর কাছেই গমন করবো। অর্থাৎ সহবাস করবো। অতএব, প্রত্যেকেই গর্ভবতী হবে এবং প্রত্যেকেই এমন সব সন্তান প্রসব করবে যারা (ভবিষ্যতে) মহান আল্লাহ পাক উনার পথে অশ্বারোহী সৈনিক হিসেবে যুদ্ধ করবে। কিন্তু পরিশেষে একজন স্ত্রী ব্যতীত আর কেউই গর্ভবতী হননি। এরপর তিনি অর্দ্ব মানবাকৃতির (অপূর্ণাঙ্গ) একটি সন্তান প্রসব করলেন। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি তিনি তখন ইন-শা-আল্লাহ বলতেন, তবে নিশ্চয়ই তাদের প্রত্যেকেই এমন সব সন্তান প্রসব করতেন, যারা প্রত্যেকেই অশ্বারোহী সৈনিক হিসেবে মহান আল্লাহ পাক উনার পথে যুদ্ধ করতেন।

শিক্ষাঃ [সহবাসের সময় বাচ্চার নিয়ত থাকলে আমরা যেনো প্রথমে ইন-শা-আল্লাহ বলে তারপর কেমন বাচ্চা চাই তাঁর নিয়ত করি]

>> আবু দাউদ শরীফঃ হাদীস শরীফ নং ২২৯।

হাফ্স ইবনে উমার আবদুল্লাহ্ ইবনে সালামা রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এবং অপর দুই ব্যক্তি একজন আমার স্বগোত্রীয় এবং অপরজন সম্ভবতঃ বানূ আসাদ গোত্রের, আমরা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম-এর নিকট যাই। আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উক্ত ব্যক্তিদ্বয়কে কোন কাজে পাঠিয়ে দেয়ার সময় বলেন, তোমরা উভয়েই সক্ষম ব্যক্তি। কাজেই তোমরা তোমাদের দ্বীনকে নিরোগ করে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য সচেষ্ট হও। অতঃপর তিনি (কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম) ইস্তেঞ্জায় যান এবং সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করে পানি চেয়ে নিয়ে (হাত মুবারক) ধৌত করলেন। অতঃপর তিনি কুরআন শরীফ তিলাওয়াত শুরু করেন। সমবেত লোকেরা তা অপছন্দ করলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইস্তেঞ্জা হতে বের হয়ে আমাদেরকে কুরআন শিক্ষা দিতেন এবং আমাদের সাথে গোশতও-খেতেন। স্ত্রী-সহবাস জনিত অপবিত্রতা ছাড়া অন্য কোন অপবিত্রতা তাকে কুরআন শরীফ মুখ দিয়ে তিলাওয়াত থেকে বিরত রাখতে পারত না। (তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, নাসাঈ শরীফ)।

হজরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম বলেন, যে ব্যক্তি সহবাসের ইচ্ছা করে, তার নিয়্যাত যেন এমন হয় যে, আমি ব্যভিচার থেকে দূরে থাকবো। আমার মন এদিক ওদিক ছুটে বেড়াবে না আর জন্ম নেবে নেককার ও সৎ সন্তান। এই নিয়্যাতে সহবাস করলে তাতে সওয়াব তো হবেই সঙ্গে সঙ্গে নেক উদ্দেশ্যও পূরণ হয়।

পরিশেষেঃ একটি মুস্তাহাব আমল হচ্ছে, যেকোন সোমবারে দুটি ভালো খেজুর হালাল টাকায় কিনে অজু সহকারে ১২৬৩ বার দুরুদ শরীফ পাঠ করে তাতে দম দেবেন এক বৈঠকে। আর যেদিন সহবাস করবেন ঐদিন ২/৩ ঘণ্টা পূর্বে তা উভয়ে ভক্ষন করবেন অজু সহকারে।


শেয়ার করুন

0 facebook: