![]() |
ধর্মীয় ডেস্ক।।
পবিত্র আল কুরআন ও হাদীস শরীফের হুকুম অনুসারে কোন এলাকা অথবা
সারা দুনিয়াব্যাপি মহামারি ছড়িয়ে পড়া মূলত, তা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত একটি শাস্তি।
যখন কোনো জাতির মধ্যে অশ্লীলতার মতো জঘন্য পাপ বেড়ে যায়, তখন
মহান আল্লাহ পাক, তিনি তাদের মহামারির মাধ্যমে শাস্তি দেন। রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
‘যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে
মহামারি আকারে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তা ছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা আগের
লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি।
কিতাব
সূত্রঃ সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ,
হাদীস শরীফ নং ৪০১৯।
হযরত
আয়েশা সিদ্দিকা আলাইহাস সালাম, উনার থেকে বর্ণিত, ‘তিনি রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-কে প্লেগ রোগ (মহামারি) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। মহান আল্লাহ পাক-এর নবী,
রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জানান, এটি হচ্ছে
এক ধরনের শাস্তি। মহান আল্লাহ পাক যার ওপর তা পাঠাতে ইচ্ছে করেন, পাঠান।
কিন্তু মহান আল্লাহ পাক এটিকে মুমিনের জন্য রহমত বানিয়েছেন। অতএব প্লেগ রোগে কোনো বান্দা
যদি ধৈর্য ধরে এবং এ বিশ্বাস নিয়ে আপন শহরে অবস্থান করতে থাকে যে,
মহান আল্লাহ
পাক তার জন্য যা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন তা ছাড়া আর কোনো বিপদ তার ওপর আসবে না; তাহলে
সেই বান্দার জন্য থাকবে শহীদের সাওয়াবের সমান সাওয়াব।’
কিতাব
সূত্রঃ সহিহ বুখারী শরীফ,
হাদীস শরীফ নং ৫৭৩৪।
দ্বিনের
ব্যাপারে উদাসীনতা জাতির ধ্বংস ডেকে আনেঃ
মহান
আল্লাহ পাক উনার অবাধ্যতা,
সীমালঙ্ঘন ও অবাধ পাপাচার মহামারির অন্যতম প্রধান কারণ হলেও শুধু
পাপীরাই তাতে আক্রান্ত হয় না;
বরং সৎ ও নেককার মানুষও তাতে আক্রান্ত হয়। কেননা তারা দ্বিনি দায়িত্ব
যথাযথভাবে পালন করলে হয়তো উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। পবিত্র আল কুরআনে ইরশাদ
হয়েছে,
[فَلَوْلاَ كَانَ مِنَ الْقُرُونِ مِن
قَبْلِكُمْ أُوْلُواْ بَقِيَّةٍ يَنْهَوْنَ عَنِ الْفَسَادِ فِي
الأَرْضِ إِلاَّ قَلِيلاً مِّمَّنْ أَنجَيْنَا مِنْهُمْ وَاتَّبَعَ الَّذِينَ ظَلَمُواْ مَا أُتْرِفُواْ فِيهِ وَكَانُواْ مُجْرِمِينَ] ‘তোমাদের পূর্বে (আগের যুগে) আমি যাদের রক্ষা
করেছিলাম তাদের মধ্যে অল্প কয়েকজন ছাড়া সৎকর্মশীল ছিল না-যারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি
করতে বাধা-নিষেধ প্রদান করত। আর পাপিষ্ঠরা তো ভোগ বিলাসে মত্ত ছিল যার সামগ্রী তাদেরকে
যথেষ্ট প্রদান করা হয়েছিল। আসলে তারা ছিল মহা অপরাধী।’
কিতাব
সূত্রঃ সূরাহ
হুদ শরীফ, আয়াত
শরীফ ১১৬।
আল
কুরআনের বর্ণনায় মহামারিতে ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিঃ
অতীতেও
মহান আল্লাহ পাক পাপাচারের শাস্তি হিসেবে মহামারি প্রাদুর্ভাব ঘটান এবং সে জাতিকে ধ্বংস
করে দেন। দাউদ (আলাইহিস সালাম)-এর যুগে এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল যা পবিত্র আল কুরআনে বর্ণিত
হয়েছে,
[أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ خَرَجُواْ مِن
دِيَارِهِمْ وَهُمْ أُلُوفٌ حَذَرَ الْمَوْتِ فَقَالَ لَهُمُ اللّهُ مُوتُواْ ثُمَّ أَحْيَاهُمْ إِنَّ اللّهَ لَذُو فَضْلٍ عَلَى النَّاسِ وَلَـكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لاَ يَشْكُرُونَ] ‘আপনি কি তাদের দেখেননি যারা মৃত্যুভয়ে হাজারে
হাজারে স্বীয় আবাসভূমি ত্যাগ করেছিল। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তাদের বলেছিলেন, তোমাদের
মৃত্যু হোক। তারপর মহান আল্লাহ পাক তাদের জীবিত করেন। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক
তিনি মানুষের উপর অনুগ্রহকারী। কিন্তু অধিকাংশ লোক শুকরিয়া প্রকাশ করে না।
কিতাব
সূত্রঃ সুরাহ বাকারা শরীফ,
আয়াত শরীফ ২৪৩।
আবদুল্লাহ
ইবনে আব্বাস (রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বলেন, ‘তারা সংখ্যায় ছিল চার হাজার। মহামারির ভয়ে
তারা পালিয়ে ছিল। তারা বলেছিল,
আমরা এমন ভূমিতে যাব যেখানে মৃত্যু নেই। অতঃপর তারা এক স্থানে একত্র
হলো। তখন আল্লাহ তাদের ওপর মৃত্যুর ফরমান জারি করেন।’ (তাফসিরে
ইবনে কাসির রহমতুল্লাহি আলাইহি)।
এ ছাড়া
একটি হাদীস শরীফের বর্ণনা থেকে বোঝা যায় মহান আল্লাহ পাক তিনি অতীতের কোনো কোনো গোত্রকে
মহামারির মাধ্যমে শাস্তি দিয়েছেন। যেমনঃ রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন, ‘এটি
মহান আল্লাহ পাক উনার গজব বা শাস্তি বনি ইসরাঈলের এক গোষ্ঠীর ওপর এসেছিল, তার অবশিষ্টাংশই
মহামারি।’
কিতাব
সূত্রঃ সুনানে তিরমিজি শরীফ,
হাদীস শরীফ ১০৬৫।
মহামারি
নিয়ে রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ভবিষ্যদ্বাণীঃ
মহামারি
ও রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়াকে রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিয়ামতের
অন্যতম আলামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘কিয়ামতের আগের ছয়টি নিদর্শন গণনা করে রাখো।
আমার মৃত্যু, অতঃপর
বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়,
এরপর তোমাদের মধ্যে ঘটবে মহামারি, বকরির
পালের মহামারির মতো।’
কিতাব
সূত্রঃ সহিহ বুখারী শরীফ,
হাদীস শরীফ নং ৩১৭৬।
তবে এই
মহামারি থেকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র নগরী মদিনা শরীফকে রক্ষা করবেন বলেও ভবিষ্যদ্বাণী
করেছেন। আবু হুরায়রা (রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মদিনায় ঢুকতে পারবে না দাজ্জাল, আর না
কোনো মহামারি(যা আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ব)।
কিতাব
সূত্রঃ সহিহ বুখারী শরীফ,
হাদীস শরীফ ৫৭৩১।
ইসলামী
শরীয়ত অনুসারে মহামারি দেখা দিলে করণীয়ঃ
যেকোনো
বিপদে বান্দা মহান আল্লাহ-পাক মুখী হোক এবং উনার কাছে ক্ষমা ও আশ্রয় প্রার্থনা করুক
এটাই মহান প্রতিপালক আল্লাহ পাক উনার প্রত্যাশা। পবিত্র আল কুরআনের একাধিক স্থানে বিপদে
আল্লাহ পাক মুখী হওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। তাই মহামারি দেখা দিলে মুমিনের প্রধান কাজ
হলো নিজের ভুল ত্রুটির জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে বিনীত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
মহান আল্লাহ পাক বলেন,
[وَلَقَدْ أَخَذْنَاهُم بِالْعَذَابِ فَمَا اسْتَكَانُوا لِرَبِّهِمْ وَمَا يَتَضَرَّعُونَ] ‘আমি
তাদের শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করলাম,
কিন্তু তারা তাদের প্রতিপালকের সামনে নত হল না এবং কাকুতি-মিনতিও
করল না।’
কিতাব
সূত্রঃ সূরাহ মু’মিনুন
শরীফ, আয়াত
শরীফ ৭৬।
আমাদের
প্রিয় নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই হলেন আজকের লক ডাউনের সর্ব প্রথম
আবিষ্কারক। এই বিষয়ে রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক
করেন, ‘কোথাও
মহামারি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা থেকে চলে এসো না। অন্যদিকে
কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গায় যেয়ো না।’
কিতাব
সূত্রঃ তিরমিজি শরীফ, হাদীস
শরীফ ১০৬৫।
উপরোক্ত
হাদীস শরীফের মূল অর্থ বেশির ভাগ লোক বুঝেনা বলে মনে করে যে মহামারি সংক্রামক। তাই
রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহামারির সংক্রমণ রোধে আক্রান্ত অঞ্চলে
যাতায়াত নিষিদ্ধ করেছেন। কিন্তু বিষয়টা এরূপ নয়, বরং মুমিন ঈমান ও ইখলাসের সঙ্গে ধৈর্য
ধারণ করবে এবং তকদিরে বিশ্বাস করবে। (ব্যপারটা বুঝতে এই ব্যাখা টা
পড়তে পারেনঃ
https://bit.ly/3bt8Dw6)
সহিহ
বুখারির বর্ণনায় পাওয়া যায় উপরোক্ত হাদীস শরীফ কারনেই শামে মহামারি দেখা দিলে
দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর ফারূক (রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ওয়া আলাইহিস সালাম) উনার
গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সফর স্থগিত করেন।
কিতাব
সূত্রঃ সহিহ বুখারী শরীফঃ হাদীস শরীফ ৫৭২৯।
মহামারিতে
মারা গেলে শহীদঃ
মহান
আল্লাহ তা’য়ালা
শাস্তি হিসেবে মহামারির প্রাদুর্ভাব ঘটান। যেন বান্দা মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে ফিরে
আসে। সুতরাং মহামারি দেখা দিলে কোনো বান্দা যদি মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে বিনীত হয়ে
তাওবা করে এবং রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশ মোতাবেক ধৈর্যের পরীক্ষা
দেয়, তবে
মহান আল্লাহ পাক তাকে শহীদের মর্যাদা দান করবেন। আবু হুরায়রা (রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু) থেকে বর্ণিত,
রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘পেটের
রোগে মারা গেলে শহীদ, প্লেগে
মারা গেলে শহীদ।’
কিতাব
সূত্রঃ সহিহ বুখারী, হাদীস
শরীফ ৫৭৩৩।
মহামারিতে
পড়ার দোয়াঃ
হাদীস
শরীফে এসেছে, যে
ব্যক্তি নিম্নোক্ত দোয়াটি সন্ধ্যায় তিনবার পাঠ করবে সকাল হওয়া পর্যন্ত তার প্রতি কোনো
বিপদ হঠাৎ চলে আসবে না। আর যে তা সকালে তিনবার পাঠ করবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার ওপর কোনো
হঠাৎ বিপদ আসবে না। দোয়াটি হলো,
‘বিসমিল্লা-হিল্লাজি ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস
সামা-ই, ওয়াহুয়াস
সামিউল আলিম’, অর্থঃ
‘মহান
আল্লাহ পাক উনার নামে যাঁর নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো বস্তুই ক্ষতি করতে পারে
না, তিনি
সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী’
কিতাব
সূত্রঃ আবু দাউদ শরীফ, হাদীস
শরীফ ৫০৮৮।
আনাস
(রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) থেকে বর্ণিত, (রোগ-ব্যাধি থেকে বাঁচার জন্য) নবী ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম পড়তেন,
‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিনাল বারাসি ওয়াল জুনুনি ওয়াল জুজামি
ওয়া মিন সাইয়্যিল আসকাম’,
অর্থঃ ‘হে
মহান আল্লাহ পাক, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেত, উন্মাদনা, কুষ্ঠ এবং সব দুরারোগ্য ব্যাধি হতে।’
কিতাব
সূত্রঃ সুনানে আবু দাউদ,
হাদীস শরীফ ১৫৫৪।
আল্লাহ
তা’য়ালা
প্রত্যেক ঈমানদার নর নারীকে হেফাজতে রাখুন এই কামনায়। আল্লাহুমা আমিন।
খবর বিভাগঃ
জাতীয়
ধর্মীয় বিদ্বেষ
0 facebook: