![]() |
চিফ রিপোর্টার।। দৈনিক ভোরের কাগজ এর সম্পাদক শ্যামল দত্ত তার পত্রিকায় “চট্টগ্রাম নিয়ে চিন্তা করার কি কেউ নেই?” শিরোনামে ‘মুক্তচিন্তা’ বিভাগে একটি সম্পাদকীয় লিখেছে যেখানে প্রকাশ্যে
ইসলাম ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে বিদ্বেষ প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা তা আমাদের পাঠকের নিকট
তুলে ধরছি।
শ্যামল দত্ত তার
বিদ্বেষ এতো জঘন্যভাবে উপস্থাপন করেছে যে তা বরদাশত করা কোন মুমিনের পক্ষে সম্ভব
নয়, সে বলেছেঃ চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী
সমাজ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে এক ধরনের অভূতপূর্ব সখ্য ও সহযোগিতা আছে। রাজনৈতিক বিভাজনকে
পাশে রেখে তারা আত্মীয়তা করেন,
ব্যবসায় জড়ান একে অপরের সঙ্গে। ফলে কোনো রাজনৈতিক
শাসনামলই তাদের জন্য কোনো বৈরী পরিবেশ তৈরি করে না। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ, বিএনপি,
জাতীয় পার্টি এমনকি জামায়াত নেতৃবৃন্দের মধ্যে
অদ্ভুত মিত্রতা ও ব্যবসায়িক আঁতাত আছে, যা চট্টগ্রাম ছাড়া
দেশের অন্য কোথাও দেখা যায় না।
চট্টগ্রামের
এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের পেছনে কী কারণ আছে তা নিয়ে হয়তো সমাজবিজ্ঞানীরা গবেষণা করতে পারেন
কিন্তু যে জিনিসটা চট্টগ্রামের চিন্তাশীল মানুষকে ভাবনায় ফেলে দিয়েছে তা হলো শিক্ষা-সংস্কৃতি
আর বৈচিত্র্যের উপাদানে সমৃদ্ধ চট্টগ্রাম কেন একটি (ইসলামী) মৌলবাদী, ধর্মীয় গোঁড়া ও উগ্রবাদী চিন্তার চর্চার কেন্দ্র
হয়ে উঠল? কবিয়াল রমেশ শীল, কবি আলাওল, আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদের চট্টগ্রাম কিংবা মাস্টারদা সূর্যসেন ও
বীরকন্যা প্রীতিলতার চট্টগ্রাম,
ভারতীয় উপমহাদেশে সাহিত্য-সংস্কৃতির অন্যতম
কেন্দ্র চট্টগ্রাম- কেন এমন একটি সাম্প্রদায়িক ও (ইসলাম) ধর্মীয় হানাহানির কদর্য চেহারা নিয়েছে
এটা ধারণা করা চিন্তাশীল মানুষের পক্ষে কঠিন। চট্টগ্রামের এই সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ ধনাঢ্য
সম্প্রদায়, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক সমাজ চট্টগ্রামের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, শিক্ষা সংস্কৃতি ও ব্যবস্থায় নজর না দেয়া। চট্টগ্রামের
ব্যবসায়ীরা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ও পীরের মুরিদ হওয়ার পেছনে যতটা আগ্রহী, ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ভালো হাসপাতাল নির্মাণের ব্যাপারে তেমন আগ্রহী নয়।
পাকিস্তানের এক পীর প্রতি বছর শুধুমাত্র চট্টগ্রামেই
আসেন এবং তাকে নিয়ে চট্টগ্রামের দলমত নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক ব্যবসায়ী নেতার মধ্যে
বাড়াবাড়ি রকমের যে কদর্য প্রতিযোগিতা- তা একেবারেই দৃষ্টিকটু পর্যায়ের। (মন্তব্যঃ ইসলামী আইন
অনুসারে মুরিদ হওয়া ফরজ, ঐ পির সাহেব কেবল মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামের সময় আসেন, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ঈদের দিন ও পালন করা সবচেয়ে
বেশী সওয়াবের কাজ, এটা নিয়ে কোন অমুসলিমের কোন কথা বলার অধিকার ই নাই, অথচ স্যামল
দত্ত কিন্তু নিজ ধর্মীয় ইসকন, জন্মাষ্টমী, রথের মতো অপচয় নিয়ে কিছু বলেনাই, এখানে
সে ডবল ষ্ট্যাণ্ডার্ড) অথচ পাহাড় নদী সমুদ্র
আর প্রকৃতির সৌন্দর্যের এই শহর,
হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ আরো অসংখ্য
নৃগোষ্ঠীর ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের শহর-চট্টগ্রামের যে অনন্যতা এই শহরের ব্যবসায়ী
সম্প্রদায়ের মন কাড়েনি। এক ধরনের সাংস্কৃতিক দৈন্যে গড়ে ওঠা ধনাঢ্য ব্যবসায়ী সমাজের
কাছে সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ সম্পদটি হারিয়ে গেছে সংস্কৃতিহীন সম্পদের প্রভাবে। যে কারণে চট্টগ্রামের
আর্য সংগীত, সংগীত পরিষদ নামের প্রতিষ্ঠানগুলো হারিয়ে গেছে অবহেলায়, অযত্নে। কে বলবে,
অবিভক্ত ভারত থাকাকালে চট্টগ্রামে সর্বভারতীয়
সংগীত সম্মেলন হয়েছিল। সাহিত্য,
সংস্কৃতি আর দেশপ্রেমের অনুপ্রেরণা ছিল চট্টগ্রাম। এখন চরম অবহেলায় পড়ে
আছে জেএম সেন হল, সূর্যসেনের আবক্ষ মূর্তি, প্রীতিলতার স্মৃতিবিজড়িত
ইউরোপিয়ান ক্লাব, জালালাবাদ যুদ্ধের স্মৃতির মিনার, মুসলিম ইনস্টিটিউট হল কিংবা আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের হেডকোয়ার্টার
সিআরবি। বারো আউলিয়ার শহর, মাইজভাণ্ডারীর শহর, সুফি,
মুর্শিদি, কবিয়ালের শহর চট্টগ্রাম
এখন দেওবন্দী ঘরানার চাপে কোণঠাসা এবং ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ সবাই এখন হাটহাজারীমুখী (মন্তব্যঃ
অর্থাৎ সে বোঝাতে চাচ্ছে হাঠহাজারি মাদ্রাসায় ধর্মীয় কার্যক্রম এখন ব্যবসায়ী,
রাজনীতিবিদ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, যা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন)।
খবর বিভাগঃ
চট্রগ্রাম বিভাগ
জাতীয়
ধর্মীয় বিদ্বেষ
0 facebook: